স্কুলের অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপে শিশুরা খুব একটা খেলাধুলার সময় পায় না। সকালে স্কুলে ক্লাস করে ঘরে ফিরে বাড়ির কাজ করতে হয় তাকে। এরপর খাওয়া-দাওয়া শেষে একটু বিশ্রাম নিয়ে তড়িঘড়ি করে কোচিং বা প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়তে বসতে হয়। এভাবে সারাক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে খেলাধুলা করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। এছাড়া অনেক অভিভাবকরাও শিশুদের খেলাধুলার সময় দিতে চান না, লেখাপড়ার জন্য সবসময় তাড়া দিতে থাকেন। এতে কোমলমতি শিশুরা মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তারা হতাশ, বিষন্ন ও খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের খেলাধুলা করাটা বাধ্যতামূলক। খেলাধুলা করতে সব সময় দূরে যেতে হবে কিংবা বড় মাঠ লাগবে তা কিন্তু নয়। বাড়ির সামনে অল্প খোলা জায়গাতেও বিকেলে শিশুকে খেলা কিংবা সাইকেল চালানোর সুযোগ দিন। খেলাধুলার মাধ্যমে যে আনন্দ পাবে তা শিশুমনের পরিপূর্ণ বিকাশের সহায়ক। খেলা দৈনন্দিন জীবনের ব্যথাবেদনা, মানসিক চাপ, ক্লান্তি, একঘেয়েমি, বিষণ্ণতা দূরে সরিয়ে মনকে শান্ত রাখে। এছাড়া খেলাধুলা শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে কতোটা প্রয়োজন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-* শারীরিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখতে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শারীরিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক না হলে বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি যথাযথ রূপ পায় না। * দাবা, সুডোকু ও ল্যাগো খেলার মাধ্যমে মস্তিষ্কের ভালো ব্যায়াম হয়। শিশু পরিকল্পনা, দূরদর্শিতা ও পড়াশোনার আগ্রহ লাভ করে। এসব খেলা শিশুর দৃষ্টি সজাগ রাখার পাশাপাশি সৃজনশীলতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। * ক্রিকেট, ফুটবলের মতো ছুটাছুটি করার সুযোগ রয়েছে এমন খেলার মাধ্যমে শরীর কাঠামো মজবুত হয়, নানা ধরনের নৈপুণ্য, দক্ষতা আয়ত্তে আসে। এছাড়া চি-বুড়ি, দাড়িয়াবান্দা বা হা-ডু-ডুর মতো খেলাও খেলতে পারে শিশুরা। * খেলাধুলায় শিশুদের উপস্থিত বুদ্ধি বাড়ে। * নিয়মিত খেলাধুলায় পড়াশোনা, আচার ব্যবহার ও বুদ্ধিমত্তাতেও এগিয়ে থাকে শিশুরা। * রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। * শিশুদের দলীয় খেলার মাধ্যমে সামাজিক হয় এবং আত্মকেন্দ্রিকতা দূর হয়। * কল্পনাশক্তি, নতুন নতুন আইডিয়া ও সৃজনশীলতা বাড়ে। তাই অভিভাবকদের বলছি, লেখাপড়ার চাপতো থাকবেই, এর পাশাপাশি আপনার সন্তানকে প্রতিদিন বিকেলে অন্তত এক ঘণ্টা হলেও খেলতে দিন। এতে করে নতুন উদ্যোমে পড়াশোনা করতে পারবে। বাড়ির সামনে জায়গা থাকলে, শিশুকে নিয়ে বিকেলে আপনি নিজেই হাঁটাহাঁটি করে আসুন। এতে আপনার স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে এবং সন্তানও খুশি হবে।