মাদকমুক্ত সমাজ গঠন সহজ অসাধ্য না হলেও অসম্ভব নয়

মাদকমুক্ত সমাজ গঠন কি সত্যিই সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব। তবে তা শুধু চিহ্নিতদের মাদককারবারীদের আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে সম্ভব নয়। গুটি কয়েক মাদককারবারীর পুনর্বাসনেও প্রত্যাশিত সমাজ আশা করা অবান্তর। কেন না, শনাক্তের বাইরে তথা দৃষ্টির অগোচরে থেকে যে রাঘববোয়ালেরা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক ছড়িয়ে দেয় তারাই ওই চিহ্নিত মাদকাকরবারী সৃষ্টি করে। রাঘববোয়ালেরা আড়ালে থাকে অর্থের বিনিময়ে দায়িত্বশীলদের ম্যানেজ করে। যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাদক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালনের কথা, সেই বিভাগের লোকবলকে নিয়েই এখন লোকমুখে রকমারি কৌতুক। ন্যূনতম জবাবদিহিতা পরীলক্ষিত হয় না। আইন প্রয়োগে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার নামেও মাদকারবারীদের নিকট থেকে কথিত আদায়কারী মাসোহারা আদায় করে। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের বিশেষ উদ্যোগের মধ্যেও তা কি বন্ধ হয়েছে?
দেশজুড়ে মাদকের অপব্যবহার রোধে নানামুখি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে ইতোমধ্যে ৪ শতাধিক মাদককারবারীকে আত্মসমর্পণ করিয়েছে। কাজটি সহজ নয়। তালিকাভুক্ত এতো মাদককারবারীর আত্মসমর্পণ অবশ্যই জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তার দক্ষতারই প্রকাশ। আগামী ৬ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির মহাসমাবেশে বেশ ক’জন আত্মসমর্পণকারীকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এসব কর্মসূচি অবশ্যই ইতিবাচক। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সহায়ক। তাই বলে এ কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়েই সমাজ মাদকমুক্ত হয়ে যাবে, এটি আশা করা বাঞ্চনীয় নয়। তবে এ কর্মসূচি ঘোষণা ও তা বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের কার্যক্রম শুরু ধরা যায়। এই শুরুর শেষ তখনই হওয়া উচিত যখন সমাজে মাদক আর সহজলভ্য থাকবে না। এটা সহজ সাধ্য নয়। তবে সম্ভব। কারণ, মাদকের কালোথাবা সমাজের শিরা উপশিরায় ভয়াবহ রূপধারন করেছে। মাদক সমাজকে একদিনে গ্রাস করেনি। সময় লেগেছে। এর দায় দায়িত্বশীলরা এড়াতে পারেন না। তাছাড়া যেসব কারণে যুবসমাজকে হতাশায় গ্রাস করে সে কারণও দূর করা সম্ভব হয়নি দীর্ঘদিনে।
যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে মাদক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেই দফতরের অধিকাংশই কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিযোগ। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার চিত্র পত্রস্থও হয়। সে হিসেবে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভ্যন্তরে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি সীমান্ত প্রহরায় সকল প্রকারের অপ্রতূলতা দূর করতে হবে। তাড়াতে হবে সরষের ভূত। সমাজে ঘাপটি মেরে থাকা তথা দৃষ্টির অগোচরে বসে সমাজে মাদক ছড়িয়ে দেয়া হোতাদের শনাক্ত করে আইনে সোপর্দ করতে না পারলে আত্মসমর্পণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি লজ্জার অধ্যায় সৃষ্টি করবে। কেন না- মূলহোতারা মারণনেশা হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, মরফিন পাচার ও সমাজে ছড়িয়ে দেয়ার কাজে অর্থের বিনিময়ে নিযুক্ত করে সমাজের দরিদ্র নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরদের। মাদক প্রশ্নে পুলিশের সাময়িক নয় স্থায়ীভাবে অনমনীয় স্বচ্ছ অভিযান অব্যাহত রেখেই একে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। সুস্থ ধারারা বিনোদন ও পর্যাপ্ত  কর্মসংস্থানের যোগান মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে অন্যতম শর্ত।