সীমান্তে মৃত্যু শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে

 

জয়েন্ট রেকর্ড অব ডিসকাশন (জেআরডি) স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে বিজিবি ও বিএসএফ’র মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের ৪৪তম সীমান্ত সম্মেলন শেষ হয়েছে। সম্মেলনে সীমান্ত হত্যার ক্ষেত্রে যৌথ তদন্তের পরিবর্তে যৌথভাবে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতঃপূর্বে সীমান্ত হত্যায় যৌথ তদন্তের সিদ্ধান্ত হলেও আপত্তি জানিয়েছিলো বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। তারা যুক্তি দেখিয়েছিলো, তদন্ত পুলিশের কাজ, বিএসএফ কোনো ঘটনার তদন্ত করতে পারে না; বরং ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, শনাক্তকরণ ও মূল্যায়ন করতে পারে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিএসএফ’র যুক্তি মেনে নেয়ায় এটি এখন নিশ্চিত যে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাসহ যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন, শনাক্তকরণ ও মূল্যায়নের কাজটি যৌথভাবে সম্পন্ন হবে। সন্দেহ নেই এর ফলে দেশ দুটির সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির পরিমাণ হ্রাস পাবে।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের দৈর্ঘ্য চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। এ সীমান্তের ভারতীয় অংশে পাহারা দেয় বিএসএফ। অভিযোগ রয়েছে, বিএসএফ কোনো রকম সতর্কতা সংকেত ছাড়াই নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করে থাকে, যাদের বেশিরভাগ বাংলাদেশি। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরেখায় মানুষ হত্যা বেড়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে অনেকেই এটিকে মৃত্যুপ্রাচীর হিসেবে চিহ্নিত করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও ভারতের কাঁটাতারের বেড়াকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ রক্ত ঝরানো বেড়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আশার কথা, সীমান্তে মৃত্যুর ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে গবাদিপশু ও মাদক চোরাচালানপ্রবণ এলাকায় সমন্বিত যৌথ টহলসহ আরও কিছু বিষয়ে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে। অবশ্য বিএসএফ প্রাণঘাতী নয় এমন (নন-লেথাল) অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করায় সীমান্তে মৃত্যুর হার কমে এসেছে। সম্মেলনে সীমান্তে মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা কার্যকরে উভয় পক্ষ আন্তরিক হবে।
এবারের সীমান্ত সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য দিক হল অনেকগুলো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- যৌথ প্রশিক্ষণ, অনুশীলন, কায়াকিং ও র্যাফটিংসহ দুঃসাহসিক প্রশিক্ষণ, যৌথ ব্যান্ড ডিসপ্লে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সফর বিনিময় কর্মসূচি। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে দুই দেশের মধ্যকার স্থলসীমান্ত ও সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি হয়েছে। ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট প্রশ্নে ভারতের প্রত্যাশা পূরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। এর ধারাবাহিকতায় সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা গেলে তা একটি দৃষ্টান্ত হবে বৈকি।

Leave a comment