ঝিনাইদহে ভাষা আন্দোলন

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ভাষা আন্দোলনের উত্তাপ ১৯৪৮ সালে একটু লেগেছিলো ঝিনাইদহে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো আন্দোলন গড়ে উঠছিলো না। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের উত্তাপ লাগে ঝিনাইদহে। উত্তাল হয় ঝিনাইদহ। তখন কোনো কলেজ ছিলো না। ঝিনাইদহের শিক্ষার্থীরা যশোরে বা ঢাকায় পড়াশুনা করতেন। তারা মাতৃভাষা আন্দোলনের সংবাদ ঝিনাইদহে পৌঁছে দিতেন।

ঢাকা ও যশোর থেকে বিভিন্ন সময় ভাষা আন্দোলনের পোস্টার ইস্তেহার  ঝিনাইদহের ছাত্রদের কাছে পৌঁছে দেয়া হতো। তার ভিত্তিতে স্থানীয় ছাত্র নেতারা পদক্ষেপ নিতেন। সাড়ে পাঁচ আনা দিয়ে এক শিশি আলতা কিনে কাঠির মাথায় তুলা পেঁচিয়ে তৈরি করা হত তুলি। সেই আলতা দিয়ে পোস্টার লেখা হতো। তারপর সেই পোস্টার দেয়ালে দেয়ালে সাটানো হতো। তখনকার এ ছোট্ট মহকুমা শহরের মানুষ জানতে পারতো। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে ঢাকায় আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। ডাকা হয় দেশব্যাপী হরতাল। ঝিনাইদহের ছাত্ররা হরতালের প্রস্তুতি নেয়। হরতাল পালন সম্পর্কে ছাত্রদের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো না। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে শহরে হরতালের সমর্থনে পোস্টারিং করা হয়। পরদিন সকালে কে বা কারা তুলে ফেলে। ২০ ফেব্রুয়ারি সারা রাত সিনেমা হলে সিনেমা চলে। মাঝে মাঝে হরতাল পালনের কথা বলেন ছাত্ররা। মানুষকে ভাষা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করা হয় এভাবে। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় হরতালের সমর্থনে শহরে মিছিল বের করা হয়। অভূতপূর্ব সাড়া মেলে। এদিকে ঢাকায় ছাত্র জনতার ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের খবর পেয়ে যান ছাত্ররা। ২২ ফেব্রুয়ারি ফের হরতালের ডাক দেয় ছাত্ররা। শহরের দোকান বন্ধ থাকে। ঝিনাইদহে ভাষা আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়ে ছিলেন বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মনোয়ারা খাতুন। ঝিনাইদহে ভাষা সৈনিকদের মধ্যে কয়েকজন বেঁচে আছেন। তবে তারা ভালোভাবে কথা বলতে পারেন না।

ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল সাহা বলেন, তিনি ছবিঘর সিনেমা হলের পাশে গোপনে পোস্টার লিখছিলেন। এক পুলিশ টের পেয়ে পা দিয়ে পোস্টারগুলো মাড়িয়ে দেয়। পুলিশকে ঘুষি মেরে পালিয়ে যান। এজন্য তাকে অনেক দিন পালিয়ে থাকতে হয়েছিলো।