স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদরের কোটালী দর্শনা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ২৭ সদস্যকে ভুয়া মৎস্যজীবী হিসেবে অভিযোগ দাখিলের পর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত প্রতিনিধি দল গতকাল বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদন্ত করে। তদন্ত করতে গিয়ে গোলকধাঁধায় পড়ে যায় তদন্ত দল। এ সময় পূর্বে থেকে ভাড়ায় করে নিয়ে আসা জাল বাড়িতে আড়ায়ের টানিয়ে রেখে মৎস্যজীবী হিসেবে নিজেদের প্রমাণের চেষ্টার কোনো কমতি করেননি কোটালী-দর্শনা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ২২ সদস্য। তবে বাড়িতে ভাড়া করা জাল টানানো থাকলেও মাছ ধরার অন্য সরঞ্জাম দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। গ্রামবাসী তাদের এই কা- কারখানা দেখে একদিকে যেমন হতবাক হয়েছে অন্যদিকে আজগার আলীর কুবুদ্ধির প্রশংসাও করেছে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের বেগমপুর বিল সরকারি বিভিন্ন শর্তে ৬ বছরের জন্য কোটালী- দর্শনা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে লিজ গ্রহণ করেন কোটালী গ্রামের আজগার আলী। বিলটি লিজ গ্রহণের পরের বছরই রাজস্ব বাদে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় সাবলিজ প্রদান করেন বেগমপুর বিলের পার্শ¦বর্তী ছোটসলুয়া গ্রামের প্রভাবশালী আ.লীগ নেতা মামুনের কাছে। যা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। এ বিষয়টিসহ কোটালী-দর্শনা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে এলাকার প্রকৃত মৎস্যজীবীরা জেলা প্রসাশকসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। এলাকার প্রকৃত মৎস্যজীবীদের করা অভিযোগের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত দল গঠন করে সরেজমিনে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। তদন্ত কর্মকর্তারা হলেন- জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মাহবুবুর রহমান তালুকদার ও জেলা সমবায় অফিসার মনজুর কাদের। তদন্ত প্রতিনিধি দল সরেজমিনে তদন্ত করার সময় আজগার আলীকে সাবলিজ প্রদানের বিষয় জানতে চাইলে আজগার আলী বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন আমি কোনো সাবলিজ দিইনি। এ সময় জেলা সমবায় কর্মকর্তা সাবলিজের চুক্তিপত্র দেখালে আজগার আলী স্বাক্ষর ও সিল তার নয় বলে দাবি করেন।
এ সময় জেলা সমবায় অফিসার আজগার আলীর স্বাক্ষর পরীক্ষা করা হবে জানালে আজগার আলী চুপসে যান। পরে তদন্ত দল অভিযুক্ত সদস্যদের বাড়ি বাড়ি যান। এ সময় পূর্ব থেকে বাঁশের আড়ার সাথে টানিয়ে রাখা নতুন ও পুরাতন জাল দেখে পরিবারের অন্য সদস্যদের জাল ছাড়া মাছ ধরার হাড়িসহ অন্য কোনো সরঞ্জাম আছে কি-না জানতে চাইলে তারা তা দেখাতে ব্যর্থ হয়। গ্রামবাসী জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার তদন্ত দল আসার কথা জানতে পেরে আজগর আলী বুধবার রাতেই কুকিয়াচাঁদপুর, আন্দুলবাড়িয়া ও যদুপুর গ্রাম থেকে মাছ ধরার জাল ধার করে নিয়ে আসেন। সেদিনই জালগুলো বাড়ির আড়ায় টানিয়ে রাখেন। শুক্রবার এই নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে, জালগুলো গুছিয়ে রাখলেও গতকাল শনিবার তদন্ত দল কোটালী গ্রামে প্রবেশের সাথে সাথেই জালগুলো আবারো টানিয়ে রাখা হয়।