স্টাফ রিপোর্টার: পদ্মা সেতু ইস্যুতে দেশে ফের আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসা বিশ্বব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এবার শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব কর্মকর্তা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি ব্যবহার করলেও দায়িত্ব পালন শেষে গাড়ির পাশ বই ফেরত দেননি বলে জানিয়েছে শুল্ক বিভাগ। এ অভিযোগে ১৬টি গাড়ি ব্যবহারকারীর পাশবই তলব করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। সেই সাথে এসব গাড়ির বর্তমান সম্ভাব্য অবস্থান ও ওই সময়ে ব্যবহারকারী কর্মকর্তার বর্তমান কর্মস্থল সম্পর্কেও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বরাবর চিঠি দিয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। তিনি বলেন, এসব গাড়ির বিস্তারিত তথ্য, ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য, বর্তমান কর্মস্থল, গাড়ির পাশবুকসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। গতকাল বুধবার ওই নোটিস বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিক ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তারা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি এনে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু দায়িত্ব পালন শেষে ওই গাড়ি সম্পর্কে এনবিআরকে জানাতে হয়। গাড়ির পাশবই জমা দিতে হয়। বিক্রি করতে চাইলে শুল্ক বিভাগের যথাযথ অনুমতি নিয়ে গাড়ির শুল্ক-কর নির্ধারণ করে তা এনবিআরে পরিশোধ করতে হয়।
ড. মইনুল খান বলেন, এর ব্যত্যয় হলে তা বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি বলেন, আমাদের কাছে থাকা প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ১৬টি গাড়ি ব্যবহারকারী বিশ্বব্যাংকের ওই কর্মকর্তারা শুল্ক সুবিধার অপব্যবহার করেছেন। তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। এসব গাড়ি গত ৪-৫ বছর আগে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা। যারা এগুলো ব্যবহার করেছেন, তারা দেশে নেই বলে জানা গেছে। ব্যবহারকারীরা কবে দেশে এসেছিলেন এবং কবে দেশ ত্যাগ করেছেন এসব তথ্যও জানতে চাওয়া হয়েছে।
মইনুল খান আরো বলেন, তদন্তের প্রয়োজন হলে গাড়িগুলো জব্দ করে মামলার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, কূটনীতিক ও দেশে অবস্থিত বিদেশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তাদের শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়ির অপব্যবহার সমপ্রতি সরব আলোচনার ইস্যু। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ইতোমধ্যে এ ধরনের বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। তাদের পাশবই এবং গাড়িও তলব করা হয়েছে।
চিঠিতে যা বলা হয়েছে: শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ সফিউর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, আলোচ্য ১৬টি গাড়ির পাশবই জমা না দেওয়ায় সরকারের রাজস্ব আটকে রয়েছে। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গোয়েন্দা দল এসব গাড়ি আটকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরণের গাড়ির পাশ বই এনবিআরকে না জানিয়ে বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব উদ্যোগে হস্তান্তর করার কোন বৈধতা নেই। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে সংস্থাটিকে এক সপ্তাহের সময়মীসা বেঁধে দেয়া হয় চিঠিতে ।
যে সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ: এনবিআরসূত্রে জানা গেছে, আলোচ্য ১৬টি গাড়ির পাশবই ২০০৬ সাল থেকে পরবর্তী সময়ে ইস্যু করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের যে সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ সুবিধা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে তারা হলেন- শকুন্তলা আকমিমানা, ক্যাথিনোয়েল খু, প্রমিতা দাসগুপ্ত (আইএফসি), বিনয়া স্বরূপ, উসম্যান সেক্ল, জোশে এডগার্ডো লোডেজক্যামডোস, মিরভা টুলিয়া, ডায়িড, গ্রিনা নিকডবার্কগার, মৃদুলা সিং, তাহসীন সাঈদ খান, মায়ুমি ইসোগেইন, তানিয়া মানা ডি মিত্রাজকো, সিরান ওজার, ফ্যাবিও পিটালুগা ও হেলেন জয় ক্রেইগ।
বিশ্বব্যাংকের ব্যাখ্যা: শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের পাঠানো ওই চিঠির বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশে সংস্থাটির প্রধান চিমিয়াও ফান। যোগাযোগ করা হলে ই-মেইলে দেয়া জবাবে তিনি জানান, আলোচ্য ১৬টি গাড়ির পাশবইয়ের মধ্যে ৯টি ইতোমধ্যে এনবিআরে জমা দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস ৩৫টি পাশবই ফেরত দিয়েছে। এর মধ্যে ওই ৯টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাকি ৭টি পাশবইয়ের বিষয়ে খোঁজ-খবর চলছে। এগুলো ফেরত দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে আমরা এনবিআরের কাছে ৬ মাসের সময়ও চেয়েছি। চলমান অসঙ্গতি সমাধানে এনবিআরের সাথে বিশ্বব্যাংক নিবিড়ভাবে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।