ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য বিভাগ এখন নিজেই প্যারালাইজে আক্রান্ত : হাওলাদ করে চলছে চারটি সরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষের চিকিৎসা কেন্দ্র ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালটি এখন নিজেই রোগী। চিকিৎসাসেবার সাথে সম্পর্কিত চারটি প্রতিষ্ঠানে লোকবলের অভাবে হাওলাদ করে চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। ফলে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতলের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালের ডাক্তার দিয়ে নার্সিং ইন্সটিটিউট, ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) ও মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) এর ক্লাস নেয়ার কারণে রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছে না। অন্যদিকে জেলা সদরের এই হাসপাতালে নেই কোনো অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার। ফলে ১০ জন সার্জন অপারেশন করতে পারছেন না। অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তারের অভাবে তুচ্ছ কারণে রোগীদের জেলার বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

হাসপাতালটিতে স্থায়ীভাবে কোনো অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার নেই। দুজন অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তারকে অন্য জায়গা থেকে ঝিনাইদহে এনে কাজ চালানো হচ্ছে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালসূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. ইমদাদ জানান, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ৪২টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। সেখানে আছে মাত্র ২৬ জন। এ সব ডাক্তার দিয়ে আবার নার্সিং ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) ও মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) এর ক্লাস নেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ভৌগলিক কারণে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালটি গুরুত্ব বহন করায় প্রতিদিন আউটডোর ইনডোরে ৮শ থেকে ১১শ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়।

২০১৬ সালে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে তিন লাখের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। লোকবলের অভাবে প্রায় আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। দুজন জনপ্রতিনিধি মানবিক কারণে ঝিনাইদহ ও হরিণাকুণ্ডু হাসপাতালের ২৪ জন স্টাফের বেতন বহন করছেন বলেও তিনি যোগ করেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ঝিনাইদহের শিশু হাসপাতালটিও এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া নার্সিং ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) ও মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুলেও লোকবল নেই।

অভিযোগ রয়েছে ১৯৯৪ সালে নিাইদহ সদর হাসপাতালটি ১শ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এই ২৩ বছরে পূর্ণাঙ্গভাবে জনবল নিয়োগ করা হয়নি। ফলে গোজা মিল দিয়ে সদর হাসপাতালের চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকের ২৬টি পদে অনেকে আবার ক্লিনিক বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে অভিযোগ। ফলে দুপুর হলেই ওই সব ডাক্তারদের দেখা মেলে না। অনেক সময় ডাক্তার সঙ্কটের অজুহাতে হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পছন্দের ক্লিনিকে। ঝিনাইদহ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচ.টি) অধ্যক্ষ ডা. আব্দুল খালেক জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ৭ জন প্রভাষকের মধ্যে ৩ জন আছে। সহকারী অধ্যাপকের ৪টি পদে আছে মাত্র ১ জন। ইন্সট্রাকটরের ৭টি পদে আছে ৩ জন। সঙ্কটের কারণে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতলের ডাক্তার দিয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে।

ঝিনাইদহ মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. অসিৎ রঞ্জন দাস জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ৭২টি পদের একটিও নেই। হাওলাদ করে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তিনি আরো জানান, দরকারি পদের মধ্যে এজন অধ্যক্ষ, ১ জন সিনিয়র লেকচারার, ৪ জন লেকচারার ও ২ জন মেডিকেল অফিসারের কোনো পদেই লোক দেয়া হয়নি। তিনি বিধি মোতাবেক পদ সৃষ্টি ও পদায়নের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছ বলে জানান।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হালিম জানান, আমরা অফিসিয়ালি ও ব্যক্তিগতভাবে এ সব প্রতিষ্ঠানে লোকবল নিয়োগের চেষ্টা করছি। আশা করা যায় আস্তে আস্তে সমাধান হবে। তিনি বলেন, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বেশ কয়েকজন মেডিকেল অফিসার, সার্জারি ও রেডিওলজিস্ট পদ শূন্য থাকায় ঝামেলা পোয়াতে হচ্ছে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের ডাক্তার দিয়ে অন্যান্য সরকারি দফতরগুলো চালানো কথা তিনি স্বীকার করেন।