আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বেপরোয়া আলমডাঙ্গা দলিল লেখক সমিতির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। জেলার শীর্ষ জনপ্রতিনিধিদের নাম ভাঙিয়ে দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ লুটপাট অব্যাহত রেখেছেন। তাদের অবৈধ চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জমি বিক্রেতা-ক্রেতা কৃষক সাধারণ।
বেশ কয়েক মাস আগে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আলমডাঙ্গা দলিল লেখক সমিতির ভেঙে দেন। দলিল লেখক সমিতির বেশুমার লুটপাট থেকে জমি ক্রেতা-বিক্রেতা উপজেলার হাজার হাজার কৃষক সাময়িক নিষ্কৃতি পেলেও আলমডাঙ্গায় আবার শুরু হয়েছে দলিল লেখক সমিতির চাঁদাবাজির মহোৎসব। সরকারি আইন ও বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে দিন-দুপুরে সকলের সামনেই চলছে এ উন্মুক্ত লুটপাট। খোদ উপজেলা চত্বরে বসেই সমিতির কতিপয় নেতা অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলিল রেজিস্ট্রি করতে সরকারকে পৌরসভা এলাকায় প্রতি লাখে শতকরা ১০ ভাগ হারে রাজস্ব অর্থাৎ লাখে ১০ হাজার টাকা রাজস্ব জমা দিতে হয়। এছাড়া দলিল প্রতি এনসি ২৪০ টাকা, ই-ফিস ১শ ও হলফনামা ২শ মোট সাড়ে ৪শ টাকা দিতে হয়। জমি পৌরসভার বাইরে হলে শতকরা ৯ ভাগ হারে রাসজস্ব দিতে হয়। কিন্তু বেআইনিভাবে গঠিত এই সমিতি সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে পৌরসভা এলাকায় প্রতি লাখে ১৬ হাজার ও ইউনিয়নে ১৫ হাজার টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সপ্তায় ২ দিন জমি রেজিস্ট্রি হয়। প্রতিদিন গড়ে ১শ ৩০ দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে বলে রেজিস্ট্রি অফিসসূত্রে জানা গেছে। সে হিসেবমতে প্রতি সপ্তায় আলমডাঙ্গা দলিল লেখক সমিতি অবৈধভাবে গড়ে ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতি মাসে ৫২ লাখ টাকা দলিল লেখক সমিতি ভাগাভাগি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রসিদবিহীন এই টাকা কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখা হয় না এবং সাধারণ সদস্যদেরও কোনো হিসেব দেয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। আলমডাঙ্গা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আমজাদ হোসেন ও সম্পাদক আজিবর রহমান কয়েকজনসহ এই বিরাট অঙ্কের টাকা প্রতিমাসে ভাগ বাটোয়ারা করেন বলে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন।
কয়েকজন দলিল লেখক জানান, তাদের কাছ থেকে সেরেস্তা খরচ আদায় করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন খাতে অফিসারকে দেয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা লোপাট করা হয়। অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে নিরুপায় হয়েই এ টাকা দিতে হচ্ছে জমির মালিক নিরীহ কৃষকদের। লেখক সমিতিকে চাঁদা না দিলে জমি রেজিস্ট্রি করা হয় না। যা ভোক্তা সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইনজ্ঞ জানান, ভোক্তা সংরক্ষণ আইনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইচ্ছা করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জেল-জরিমানা করতে পারেন। কয়েক যুগ ধরে দলিল লেখকদের এই চাঁদাবাজিতে জমির মালিকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।