বাল্যবিয়ের বিশেষ বিধান ছেলেদের বেলায়ও প্রযোজ্য

 

স্টাফ রিপোর্টার: সংসদে উত্থাপিত বাল্যবিয়ে নিরোধ বিলের বিশেষ প্রেক্ষাপটে বিয়ের বয়সের বিধান পরিবর্তন করার সুপারিশ করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এতে বিশেষ প্রেক্ষাপটে বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিষয়টি শুধু নারীদের মধ্যেই আটকে থাকছে না, পুরুষও এ সুবিধার আওতায় আসছে।

বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই বিশেষ প্রেক্ষাপটে মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে আলোচিত বাল্যবিয়ে নিরোধ বিল-২০১৬ সংসদে ওঠে গত ৮ ডিসেম্বর। খসড়া আইনটি পরীক্ষা করে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার সংসদে উপস্থাপন করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি রেবেকা মমিন।

সংসদে উত্থাপিত বিলে বিশেষ বিধান সম্পর্কে বলা হয়, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিয়ে সম্পাদিত হলে তা এই আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না।’ এখানে সংসদীয় কমিটি কোনো নারীর শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং মাতা-পিতার সঙ্গে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতির শব্দটি যোগ করেছে। অর্থাৎ বিলটি পাসের সময় সংসদে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা হলে নারীর পাশাপাশি পুরুষের ক্ষেত্রেও বিশেষ প্রেক্ষাপটের বিধান প্রযোজ্য হবে। একইসাথে ওই বিধানে বাবা-মা বা যেখানে প্রয়োজন সেখানে অভিভাবকের সম্মতির বিধান রাখা যুক্ত হবে। এছাড়া বিশেষ প্রেক্ষাপট বিধি দ্বারা নির্ধারিত রাখারও সুপারিশ করা হয়েছে, যা সংসদে উত্থাপিত খসড়া আইনে উল্লেখ ছিলো না। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়।
প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যুনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়। এই বিধানের সুযোগে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে উৎসাহিত হবে আশঙ্কা করে তা বাতিলের দাবি তুলেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।

এর জবাবে বিলটি সংসদে তোলার একদিন আগেই সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধিতাকারীরা বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞান। সমাজ বাস্তবতার কথা বিবেচেনায় রেখেই এই আইন করা হচ্ছে।
তবে ওই বিলের পক্ষে সরকারের যুক্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন এইচআরডবিস্নউ বলেছে, এ থেকে মনে হচ্ছে, ধর্ষণের কারণে কোনো মেয়ে গর্ভবতী হলে তাকেও ওই আইন দেখিয়ে ধর্ষকের সাথে বিয়েতে বাধ্য করা হতে পারে। ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বলেন, বাল্যবিয়ে সারা বিশ্বের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ সমস্যাটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাল্যবিয়ে মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত গার্লস সামিটে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে বিয়ের হার শূন্যে, ১৫-১৮ বছর বয়সীদের বিয়ের হার এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিয়েমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধে একটি যুগোপযোগী আইন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দেশের মানুষ বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে জানেন কিন্তু মানেন না। বাল্যবিয়ে বন্ধে সংসদে উত্থাপিত আইনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়, কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে তিনি সর্বোচ্চ ১৫ দিনের আটকাদেশ বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে। আগের আইনে এই অপরাধে নারীর কারাদণ্ডের বিধান মওকুফ থাকলেও এবার তা নেই। তবে সংসদীয় কমিটি ১৫ দিনের পরিবর্তে এক মাসের কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজারের বদলে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখার সুপারিশ করেছে।