অভাবও ঘোচাতে হবে জাগাতেও হবে বিবেক

বাংলার বহুল প্রচলিত প্রবাদ- অভাব যায় না শুলে আর স্বভাব যায় না ধুলে। বাংলাদেশ ভিক্ষুকমুক্ত করার তোড়জোড়ে ঘুরে ফিরেই প্রবাদটি উঠে আসছে সমালোচকদের মুখে। সত্যিই কি আমাদের দেশের ভিক্ষুকরা অভাবের কারণেই ভিক্ষার জন্য হাত বাড়ায়? নাকি এক সময় অভাবী হলেও এখন স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে? প্রশ্নটি যতোটা সহজ, জবাবটা দেশের বাস্তবতায় অবশ্যই অতোটা সহজ নয়।
অবশ্যই ভিক্ষাবৃত্তি সভ্যসমাজে সমর্থনযোগ্য নয়। অন্যের দয়া দান-দাক্ষিণা নেয়া অর্মাদাকরও বটে। যদিও ভিক্ষুক কি ওই মাপকাঠিতে তার মর্যাদা মাপেন যে মাপকাঠিতে জাগ্রত বিবেকের মানুষ মাপেন? সে কারণেই ভিক্ষুকদের পুুনর্বাসনের পাশাপাশি তাদের আত্মমর্যাদা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণাও দেয়া দরকার। যদিও দীর্ঘদিনের স্বভাবগ্রস্ত ভিক্ষুক তাতে কতোটা কর্ণপাত করবেন তা নিয়ে সন্দেহ যথেষ্ট। তারপরও এটা জোর দিয়েই বলা যায়, এখনই পুরো সমাজ ভিক্ষুকমুক্ত না হলেও একটি ভালো কাজের যে সূচনা করা হয়েছে তা তো আর অস্বীকার করা যায় না। অবশ্যই আরো অনেক আগেই ভিক্ষুকমুক্ত দেশগড়ার প্রত্যয়ে আমাদের নামতে হতো পথে। বিলম্ব হলেও ভিক্ষুকমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ভিক্ষুকদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের পুনর্বাসনের কাজ চলছে। সরকার প্রতিমাসে তালিকাভুক্তদের ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে। এরপরও যদি ভিক্ষুক ভিক্ষার থলি নিয়ে পথে বের হন, অন্যের কাছে হাত পাতেন তাহলে তার স্বভাব ঘোচাতে আইন প্রয়োগে নিশ্চয় আপত্তি থাকবে না। তাছাড়া পুরাতনদের ভিক্ষাবৃত্তি থেকে নিবৃত করার পাশাপাশি নতুন ভিক্ষুক যাতে সৃষ্টি না হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। আর সেটা করতে হলে দরকার পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের জোগানসহ প্রত্যেকের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় আশু পদক্ষেপ।
গত ০৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একজন নূরজাহানের ভিক্ষাবৃত্তির সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে যে বিষয়টি জোর দিয়ে বলা হয়েছে তা হলো- আসল পরিচয় আড়াল করে দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষা করলেও ভিক্ষুকমুক্ত দেশগড়ার চলমান কর্মসূচির কিছুই তিনি জানেন না। জানাতে হবে, বোঝাতে হবে। অভাব ঘুচিয়ে জাগিয়ে তুলতে হবে বিবেক।