উচ্চ আদালতের দেয়া জামিনের মেয়াদ শেষে চুয়াডাঙ্গা পৌর সচিব কাজী শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি ওয়ারেন্ট : পুলিশের দৃষ্টিতে পলাতক তিনি

 

চাকরি থেকে রখাস্তের আদেশ উচ্চ আদালত কর্তৃক মাসের স্থগিত : স্বপদে যোগদানের আবেদন করেও দায়িত্ব পাননি আফরোজা পারভীন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সচিব কাজী শরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করার আদেশ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে সচিবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া পৌরসভার টিকাদান সুপারভাইজার আফরোজা পারভীন উচ্চ আদালতে রিট করে ৬ মাসের জন্য চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশ স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। এ আদেশ বলে তিনি গত ১৫ জানুয়ারি পৌরসভায় সপদে যোগাদানের দরখাস্ত করলেও তিনি দায়িত্ব পাননি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমাকে আমার দায়িত্ব তো দেয়া হয়নি, বরঞ্চ হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করতে দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া বেতনও পাচ্ছি না। এসব বিষয়ে লিখিতভাবে পৌরসভায় মেয়র বরাবরা আবেদন করেও গত কয়েকদিনে প্রতিকার মেলেনি।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার টিকাদান সুপারভাইজার মোছা. আফরোজা পারভীন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পৌরসভার সচিব কাজী শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পৌরসভায় সচিবের কক্ষেই গত ১২ জুলাই তিনি শ্লিলতাহানির শিকার হন বলে এ মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে সচিব উচ্চ আদালত থেকে ২৫ অক্টোবর ৪ সপ্তাহের জামিন লাভ করেন। এরপর জামিনের মেয়াদ বর্ধিত বা মামলার বিচারিক আদালত তথা চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিন লাভ করেননি। সচিবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি ওয়ারেন্টের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক। গতকাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সচিব কাজী শরিফুল ইসলাম পুলিশের দৃষ্টিতে পলাতক।

এদিকে আফরোজা পারভীনকে গত ৫ ডিসেম্বর তার চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু। চাকরি থেকে বরখাস্ত পত্রে বলা হয়, ব্যক্তিগত নথিসহ ১২ জুলাই ঘ্টনার প্রেক্ষিতে দখিলকৃত জবাব, উক্ত তারিখের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন, আপনার কর্তৃক পৌরসভার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসত্য মামলা সম্পর্কিত পৌর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতিবেদন ও তদপরবর্তী আপনার কার্যকলা এবং ১ ডিসেম্বর ১৬ সকল সাড়ে ৯টায় নিম্ব স্বাক্ষরকারি  (মেয়র) কর্তৃক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি পরিদর্শন কালে আপনি স্টোর কিপার শংকরচন্দ্র বিশ্বাসের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। আপনার বসার নির্ধারিত কক্ষে উপস্থিত না থাকার কারণ জিজ্ঞাসাব করলে অপনি সদুত্তর দিতে পারেননি। এবঙ নিম্ন স্বাক্ষরকারী তথা হতে প্রস্থানের পর পরই আপনি নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে উদ্দেশ করে উচ্চ স্বরে অশালীন কথাবার্তা বলেছেন যা নিম্ন স্বাক্ষরকারীর কর্ণগোচর হয়েছে।

চাকরি থেকে বরখাস্ত পত্রে আরো বলা হয়েছে, আপনি পৌর কর্তৃপক্ষকে অবজ্ঞা, অবহেলা, অসদাচরণ শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন ও ডেপৗরসভার ক্ষতির কাজে লিপ্ত রয়েছেন। পৌরসভা আপনার নিকট নিরাপদ নয়। আপনি পৌর কর্মচারী চাকুরি বিধিমামলার ১৯৯২ এর ৩৯ এর ৪,৬,৭ এর ক. খ. ছ ধারায় দোষী। আপনাকে পৌরসভার চচাকুরিতে বহাল রাখা সমুচিন নয়। এমতাবস্থায় পৌর পরিষদের ৫ ডিসেম্বর.১৬ তালিখে অনুষ্ঠিত ৭ নং বিশেষ সভার মর্ম সার্বিক পর্যালোচনাসহ পৌরস্বার্থে পৌর কর্মচারী চকরি বিধিমালা ১৯৯২ এর ৩৫(২) ধারা মোতাবেক আপনাকে ৯০ দিনের বেতন বাবদ ৭৫ হাজার ৬৭৮ টাকার চেক  প্রদানপূর্বক চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ বরখাস্তের বিরুদ্ধে আফরোজা পারভীন উচ্চ আদালতে রিট করেন। তিনি গত ১৫ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় লিখিতভাবে কাজে যোগাদানের জন্য আবেদন করেন। এ আবেদনে বলা হয়, ইংরেজি ৫ ডিসেম্বর ১৬ তালিখে চুয়া. পৌঃ ২০১৬/১৪৬ স্বারকবলে আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশ দেয়া হয়। যার বিরুদ্ধে আমি হাইকোর্টে রিট আবেদন করি। শুনানি অন্তে ৯ জানুয়ারি আপনার দেয়া আদেশের কার্যকরিতা ৬ মাস যাবত স্থগিতের জন্য হাইকোর্ট আদেশ দেয়ায় ‌ওই আবেদেশর কপি ১২ জানুয়ারি হাতে পাই। তার সত্যায়িত কটি অত্র আবেদনের সাথে যুক্ত করে আমার স্বপদে কাজে যোগদিবার আদেশ পাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। আফরোজা পারভীন এ আবেদনে সাড়া পাননি বলে অভিযোগ করে বলেছেন, পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের অদেশের নির্দেশনা পালনপূর্বক কাজ করার যাবতীয় সুযোগ প্রদানের জন্য পুনরায় লিখিতভাবে আবেদন করেছি। ২৬ জানুয়ারি লেখা আবেদনপত্র ২৯ জানুয়ারি দফতরে গ্রহণ করা হয়েছে। এ অবেদনে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার  টিকাদান সুপারভাইজার (স্থায়ী) পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় আমাকে চাকরি হতে বরখাস্তের আদেশ দেয়া হয়। যে কারণে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আদেশটি ৬ মাসের জন্য স্থগিত আদেশ প্রাপ্ত হয়ে অদেশের সহি মোহরী নকল দাখিল দিয়ে যোগাদানপত্র পেশ করলেও আমাকে কোন সুবিধা দেয়া হয়নি। বা দাপ্তরিক কা করতে দেয়া হচ্ছে না। হাজিরা খাতাও স্বাক্ষর করতে দেয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে গতকাল চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরীর সাথে যোযগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগের যথার্থতা নেই। কেননা, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার টিকাদান সুপারভাইজার মোছা. আফরোজা পারভীনকে বিগত ০৫/১২/২০১৬ তারিখে চুয়াঃ/পৌঃ/২০১৬/১৪৯৬ নং স্মারকে জনস্বার্থে পৌরসভা কর্মচারী চাকরি বিধিমালা, ১৯৯২ এর ৫৩ (২) বিধি মোতাবেক যথাযথভাবে চাকরি হতে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে বরখাস্তকৃত টিকাদান সুপারভাইজার মোছা. আফরোজা পারভীন ওই বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোটে রিট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্জ উক্ত পিটিশন শুনানী অন্তে বিগত ০৯/০১/২০১৭ তারিখে রুলনিশি জারী করতঃ চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার বিগত ০৫/১২/২০১৬ তারিখের চুয়াঃ/পৌঃ/২০১৬/১৪৯৬ নং স্মারকে চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশের কার্যকারিতা ০৬ (ছয়) মাসের জন্য স্থগিত (ঝঃধু) প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, বরখাস্তকৃত কর্মচারী রিট পিটিশন দাখিলের পূর্বে ১৮-১২-২০১৬ তারিখে সচিব স্থানীয় সরকার বিভাগ মন্ত্রণালয়ে পৌর কর্মচারী চাকরি বিধিমলিা ১৯৯২ এর ৪৯ ধারা মতে একটি বিভাগীয় আপিল দাখিল করেন। যা অদ্যবধি বিবেচনাধীন রয়েছে। মন্ত্রণালয়ে আপিল দায়েরের বিয়টি সম্পন্ন গোপন রেখে আদালতকে স্থগিতাদেশ (ঝঃধু) লাভ করে। ফলে উক্ত আদেশ প্রাপ্ত হয়ে উক্ত মামলার বিষয়ে সুপ্রিমকোটের বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শক্রমে হাইকোর্ট বিভাগের ওই দ্বৈত বেঞ্জ উক্ত রিট পিটিশন শুনানি অন্তে বিগত ০৯/০১/২০১৭ তারিখের প্রদত্ত স্থগিত আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার জন্য চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা হতে মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের আপীল বিভাগে লিভ টু  আপিল দাখিলের জন্য সুপ্রিমকোর্টের বিজ্ঞ অ্যাডভোকেট অন রেকড নুরুল ইসলাম ভুইয়াকে নিয়োগ দেয়া হলে তিনি ওই স্থগিতাদেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ২৯২/২০১৭ দায়ের করেন। যা  আদালতে অপেক্ষামান আছে।