লাভজনক হওয়ায় মেহেরপুরে কলার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে

 

মেহেরপুর অফিস: একবার চারা রোপণ করে ২৪ মাসে ৩ বার ফলন পাওয়া যায়। খরচ কম; লাভ বেশি, তাই মেহেরপুরের চাষিরা কলাচাষে ঝুঁকে পড়েছেন। মাটি ও আবহাওয়া কলাচাষের উপযুক্ত তাই দিনদিন মেহেরপুরে কলার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেহেরপুরের এই কলাচাষ, ব্যবসা ও পরিবহনের সাথে জড়িত রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।

মেহেরপুর সদর উপজেলার বন্দর, আমদহ, চকশ্যামনগর, আমদহ, আশরাফপুর, নূরপুর, পিরোজপুর, টুঙ্গী, কাঁঠালপোতা, সোনাপুর, বলিয়ারপুর, গহরপুর, কলাইডাঙ্গা, যুগিন্দা, রাজনগর, আমঝুপি ও চাঁদবিল এবং মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী, দারিয়াপুর, গৌরিনগর, পুরন্দরপুর, গোপালনগর, বাগোয়ান, আনন্দবাস, মহাজনপুর, গোপালপুর, কোমরপুর, গোপালপুর ও যতারপুর গ্রামের মাঠে প্রচুর পরিমাণ কলাচাষ হয়েছে। গাংনী উপজেলার কিছুকিছু মাঠেও কলার চাষ হচ্ছে। জেলা কৃষি বিভাগের হিসেব মতে গেল মরসুমে জেলায় কলাচাষ হয়েছে এক হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে। এ মরসুমে এক হাজার ৫শ হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে বলে জেলা কৃষি বিভাগের ধারণা।

মুজিবনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের চাষি হাবিবুর রহমান বলেন- মহাজনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল মান্নান মাস্টারের অনুপ্রেরণায় তার পরিবারের লোকজন আশির দশকের প্রথম দিকে ভারত থেকে ৪শ জয়েন্ট গভর্নর কলার চারা আমদানি করে গ্রামের মাঠের এক বিঘা জমিতে চাষ করেছিলেন। সেই থেকে মেহেরপুর জেলায় আস্তে আস্তে কলাচাষ ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মেহেরপুরের এ কলার চাহিদা থাকায় বর্তমানে এ জেলা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।

মহাজনপুর গ্রামের চাষি লিটন জানালেন- তিনি এ বছর এক বিঘা জমিতে কলার চারা রোপণ করেছেন। কোনো রাসায়িক সার না দিয়ে তিনি তার ওই জমিতে ৮ টলি গোবর সার দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন- প্রতি বছরের পৌষ মাসে কলার চারা রোপণ করার উপযুক্ত সময়। মাঘ মাসে কলার চারা জমিতে লেগে গেলে একটি সেচ দিতে হয়। মাটি ঝরঝরে হলে জমি কুপিয়ে দিতে হবে। এরপর গাছের গোড়া থেকে বের হওয়া চারা কেটে দিতে। এভাবে একটু যত্ন আর গবাদি পশুর আক্রমণ ও কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চাষির মুখে হাসি ফুটবে। তিনি আরো জানালেন, এক বিঘা জমিতে কলার চাষ করতে প্রথম বছরে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিবিঘা জমিতে প্রতি বছর ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ কাদি কলা পাওয়া যায়। যা ক্ষেত থেকে পাইকারি মূল্যে বিক্রি করলে এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এভাবে ২ বছরে মোট ৩ বার কলা পাওয়া যাবে। পরের ২ বার সার-বিষ ও পানি সেচ বাবদ সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা করে খরচ করলে যথেষ্ট। এতে বাকি ২ বার এক লাখ টাকা করে মোট ২ লাখ টাকার কলা বিক্রি করা যাবে।

কলাচাষ লাভ জনক হওয়ায় একই এলাকার চাষি ফয়জুল্লাহ জানালেন- মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে প্রচুর পরিমাণ কলাচাষ হয়েছে। কলাচাষ লাভজনক হওয়ায় তার এলাকার কোহিনুর ২২ বিঘা, ইজারুল ২৩ বিঘা, হোসেন ৬ বিঘা, খোকন ৪ বিঘা, কালু মেম্বর ২ বিঘা জমিতে কলাচাষ করেছেন। আগামী মরসুমে তিনি নিজেও কয়েক বিঘা কলাচাষ করবেন বলে আরো জানালেন। সাতক্ষীরা থেকে আগত ব্যবসায়ী হাসান জানান- মেহেরপুরের কলার চাহিদা সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে। তিনি মেহেরপুর থেকে প্রতিমাসে কমপক্ষে ৪ ট্রাক করে কলা কিনে সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠান।

মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম কামরুজ্জামান বলেন- লাভজনক হওয়ায় মেহেরপুরের চাষিরা কলাচাষ করছেন। তিনি আরো বলেন- মেহেরপুরে জয়েন্ট গভর্নর, মেহের সাগর, দুধসর, সবরে, চাপা, চিনিচাঁপাসহ বিভিন্ন ধরনের পাকা কলার চাষ হচ্ছে। সম্প্রতি কৃষিবিভাগ রান্না করে খাওয়ার জন্য উন্নত জাতের কাঁচকলা চারা সরবরাহ ও চাষ করার জন্য চাষিদের উদ্বুব্ধ করছে। তবে তিনি একই জমিতে একবার অর্থাৎ ২৪ মাসের বেশি কলাচাষ না করতে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে জমির ঊর্বরতা শক্তি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।

মুজিবনগর উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা ইফতেখারুল ইসলাম জানান- কলাচাষিদের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সারা দিন মাঠে থাকছেন। চাষিদের কলাচাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। সারাদেশে মেহেরপুরের কলার চাহিদা থাকায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি কৃষি বিভাগ ব্যবসায়ী ও কৃষকদের কলাতে কার্বাইড ও বিষ স্প্রে না করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে।