মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ হচ্ছে : জাতিসংঘ

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী রাখাইন প্রদেশে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ও নারীদের ধর্ষণ করেছে। একই সাথে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়েছে। সম্ভবত দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নিধনযজ্ঞে লিপ্ত। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচার-নিপীড়ন এবং সহিংসতার ভয়ঙ্কর সব সাক্ষ্য প্রকাশ করা হয়েছে। রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা এক মহিলা জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, তাকে ধর্ষণের চেষ্টাকালে পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে বাঁচাতে আসলে হামলাকারীরা গলা কেটে তাকে হত্যা করে। আর জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত অক্টোবরে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনার পর থেকে নিপীড়নের মুখে অন্তত ৯২ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের ৪ তদন্ত কর্মকর্তা রাখাইনের মংডু থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া ২২০ জন রোহিঙ্গার সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। দেখা গেছে, এসব মানুষের পরিবারের অর্ধেক মানুষই নিহত হয়েছেন। ১০১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়, সেনাবাহিনীর অভিযানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। সাক্ষ্যদানকারী রোহিঙ্গারা সেখানে হত্যা, ধর্ষণ এবং এ ধরনের অনেক সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছে। অর্ধেকের বেশি নারী বলেছেন, তারা ধর্ষণ বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সাক্ষ্যদানকারী রোহিঙ্গারা আরও জানিয়েছেন সেখানে অনেক রোহিঙ্গা পরিবারের সবাইকে তাদের বাড়িতে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের স্কুল, মসজিদ, ক্ষেতের ফসল এবং গবাদিপশু।

গত অক্টোবরে এক হামলায় তিনটি সীমান্ত ফাঁড়িতে নয়জন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর এই অভিযান শুরু হয়। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘জায়গা পরিষ্কার করা অভিযানে’ কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছে। এদের অনেকেই নিহত হয়েছে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে আবার অনেকে নিরাপত্তাবাহিনীর গ্রেনেডে। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলছেন, যে সাক্ষ্য-গ্রমাণ তারা পেয়েছেন, তাতে তাদের মনে হচ্ছে রাখাইনে যা ঘটছে তা সম্ভবত মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং জাতিগত নিধনযজ্ঞ। আর এর দায়িত্ব মিয়ানমারকেই নিতে হবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেন এই প্রতিবেদনের বিষয়ে এক বিবৃতিতে গতকাল শুক্রবার বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের টার্গেট করে যে ধরনের বর্বরতা চালানো হয়েছে তা মেনে নেয়া যায় না। রাখাইনে যা ঘটছে তা সম্ভবত মানবতাবিরোধী অপরাধ। এই অপরাধ বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কড়া প্রতিবাদ জানানো উচিত।

তবে মিয়ানমার অবশ্য বরাবরই কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা অস্বীকার করছে। মিয়ানমার এখনো এই প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। দেশটির প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র তিন কিয়াও এর কার্যালয় জানিয়েছে, জাতিসংঘের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

মাকে ধর্ষণে বাধা দেয়ায় পাঁচ বছরের মেয়েকে হত্যা: জাতিসংঘের প্রতিবেদনে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচার-নিপীড়ন এবং সহিংসতার ভয়ঙ্কর সব সাক্ষ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এক রোহিঙ্গা নারী জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, তাকে যখন ধর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছিলো, তখন তার ৫ বছর বয়সী মেয়ে এসে রক্ষা করার চেষ্টা করছিলো। তখন হামলাকারীদের একজন তার মেয়েকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। আরেক নারী জানান, তার মাত্র আট মাসের ছেলের গলা কেটে হত্যা করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

অক্টোবর থেকে ৯২ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত: গত অক্টোবরের পর থেকে রাখাইনে নিপীড়নের মুখে অন্তত ৯২ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, জাতিসংঘ জানিয়েছে। মানবিক কর্মসূচির সমন্বয় বিষয়ক জাতিসংঘ কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) দেয়া তথ্য উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার একথা বলেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, বাস্তুচ্যুত ওই মানুষদের মধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ৬৯ হাজার। বাস্তুচ্যুত মানুষদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা মুসলিম। তবে অন্যান্য সম্প্রদায়েরও কিছু মানুষও বাস্তুচ্যুত হয়েছে।