অমানবিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত আচরণ প্রত্যাশা নয়

 

গত কয়েক দিনে সামাজিক গণমাধ্যমে একজন জনপ্রতিনিধির অমানবিক আচরণ সমালোচনার ঝড় তুলেছে। প্রশ্ন উঠেছে, জনপ্রতিনিধি হওয়ার কোনো যোগ্যতা তিনি রাখেন কি-না। যে কি-না শিশুদের প্রতি মানবিক নয় তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠাই স্বাভাবিক। সেই সাথে ঘটনার নেপথ্যে যারা ছিলেন তাদের অপরাধও ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার কোনো সুযোগ নেই এবং ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে। ৩১ জানুয়ারি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলাধীন নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কয়েকটি ইভেন্টের মধ্যে একটি ছিলো প্রতীকী পদ্মা সেতু তৈরি করে তার ওপর দিয়ে চলাচল। ক্রীড়ানুষ্ঠানের এক পর্যায়ে স্কুলছাত্রদের শরীরে পদ্মা সেতু তৈরি ও তা পরিদর্শনের জন্য প্রধান অতিথি নূর হোসেনকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে আহ্বান জানানো হয়। প্রথমত তিনি শিক্ষার্থীদের শরীরের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে আপত্তি জানালেও স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনুরোধে মানব তৈরি প্রতিকী পদ্মাসেতুতে ওঠেন এবং কোমলমতি শিশু-কিশোরদের পিঠের ওপর দিয়ে জুতা পায়ে হেঁটে ওই সেতু পার হন। যদিও এর আগেই সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দেশ-বিদেশে সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে এবং তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার জন্তু দেয়। ইতোমধ্যে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। সংঘটিত ঘটনার সাথে জড়িত জনপ্রতিনিধি এবং অন্য সবার প্রতি আমরা ধিক্কার।

যিনি একজন জনপ্রতিনিধি তার কাছ থেকে এমন অমানবিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত আচরণ কেউ আশা করে না। প্রকাশিত সংবাদে যদিও বলা হয়েছে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনুরোধে তিনি ওই সেতু পার হয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে এ রকম কোনো লক্ষণ স্পষ্ট হয়নি। বরং তার মুখাবয়ব ও আচরণে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি স্বেচ্ছায় এবং স্বপ্রণোদিত হয়েই কাজটি করেছেন। সেতু পার হয়ে তিনি উল্লাস প্রকাশ তো করেছেনই সেইসাথে সেতু হয়ে যেসব শিক্ষার্থী তার ভার বহন করেছে তাদের পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কৃত করেছেন। এমনকি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টেলিসাক্ষাৎকারে দেয়া বক্তব্যেও তিনি এর জন্য কোনো দুঃখ প্রকাশ করেননি। বরং বিষয়টিকে খুব স্বাভাবিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। সংশ্লিষ্ট কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর অনুরোধে এ ধরনের অমানবিক আচরণ তিনি করতে পারেন কি-না এমন বিবেক বোধ যার মধ্যে কাজ করে না কারো ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে তিনি তার কৃত অপরাধ থেকে পার পেতে পারেন না। এ কথা সত্য যে, আমাদের দেশে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা উচ্চ পর্যায়ের কাউকে সম্মান দেখাতে গিয়ে কিংবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো কার্য হাসিলে জন্য এমন সব কর্মকাণ্ড করেন যা মেনে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যানকে শিক্ষার্থীদের তৈরি মানবসেতু পার হতে অনুরোধ করার যে অভিযোগ উঠেছে এর সত্যতা যাচাই জরুরি এবং শিক্ষকের এমন আচরণও  ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।

অতীতে এ ধরনের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। বিষয়টিকে কেউই গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি। ফলে একশ্রেণির লোভী ও বিকৃত চিন্তার মানুষ নিজের অপমানের মধ্যে অন্যকে সম্মান দেখানোটাকে স্বাভাবিক বলেই মেনে নিয়েছে। নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ঘটনার সাথে যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই কেবল ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পারে। প্রয়োজনীয় ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের ওপর এ ধরনের অমানবিক আচরণের স্থায়ী প্রতিকার হোক।