সাবেক এসপি বাবুলের বিরুদ্ধে এবার এসআই খুনের অভিযোগ

 

এসআইয়ের স্ত্রীর সাথে বাবুলের পরকীয়ার অভিযোগ : শৈলকূপায় মাথায় কুপিয়ে আকরামকে হত্যা করা হয়

স্টাফ রিপোর্টার: পরকীয়ার সম্পর্কের জের ধরে পুলিশে কর্মরত এক এসআইকে মাথায় কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে চাকরিচ্যুত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে। দুই বছর আগের এই হত্যাকাণ্ডকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। তারপরও নিহত এসআই আকরাম হোসেনের বোন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে রেখেছিলেন। সেই মামলাটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এখন বিচারের আশায় আকরামের ছোট বোন জান্নাত আরা পারভীন রিনি গতকাল সোমবার বাবুল আক্তারের শ্বশুরের সাথে দেখা করে বিচার চেয়েছেন।

বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশারফ হোসেন বলেন, রিনি তার কাছে এসেছিলেন। এতোদিন বাবুলের পরকীয়ার কথা তিনি শুনলেও কার সাথে জানতেন না। এখন তিনি বুঝতে পারছেন পুলিশের বিমানবন্দরে এসবিতে কর্মরত এসআই আকরাম হোসেনের স্ত্রী বনানী বিনতে বছির বর্ণির সাথেই তার সম্পর্ক ছিলো। তিনি বলেন, আমি চাই মিতু হত্যার তদন্তের সাথে আকরামের হত্যার তদন্তও করা হোক। তাহলে আসল ঘটনা সবাই জানতে পারবেন।

নিহত আকরাম হোসেনের বোন রিনি বলেন, ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকূপায় মহাসড়কে মাথায় কুপিয়ে তার ভাইকে আহত করা হয়। ১৭ দিন চিকিত্সাধীন থাকার পর তিনি মারা যান। তখন পুলিশ এটি ট্রাক দূর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করে। চিকিত্সকরা তখন তাদের জানিয়েছিলেন, আকরামের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ থেকে আমরা সন্দেহ করি এটি হত্যা। কিন্তু ওই ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। আমরা ওই মামলায় বাবুল আক্তার, তার ফুফাতো ভাই সাদিমুল ইসলাম মুন ও আকরামের স্ত্রী বর্ণিকে আসামি করি। কিন্তু পুলিশ তাদের নাম বাদ দিয়ে একটি মামলা রেকর্ড করলেও তদন্ত আর এগোয়নি।

রিনি অভিযোগ করেন, আমার ভাইয়ের সাথে তার স্ত্রীর মধ্যে বাবুল আক্তারকে নিয়ে সম্পর্কের অবনতি হয়। এক পর্যায়ে আমার ভাই তার স্ত্রীকে ঝিনাইদহে পাঠিয়ে দেয়। এ নিয়ে মীমাংসার কথা বলে ঝিনাইদহে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের মগবাজারে একটি ফ্লাট ছিলো। সেই ফ্লাটে এখন বর্ণি বসবাস করে। বাবুল আক্তারও বর্তমানে ফ্লাটের আশপাশেই থাকেন। তাদের দুজনের মধ্যে এখনও খুবই সখ্যতা রয়েছে। তিনি বলেন, সাতক্ষীরাতে বাবুল আক্তারের বাবা ও বর্ণির বাবা পাশাপাশি বাসায় থাকতেন। বর্ণির বাবা বিআরডিবিতে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে তাদের দুজনের মধ্যে পারিবারিকভাবে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। তখন থেকেই বাবুল আক্তারের সাথে বর্ণির একটি সম্পর্ক ছিলো। যেটি এখনও আছে।

বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশারফ হোসেন বলেন, বাবুল কোনো অপরাধ করলে আমি চাই তার শাস্তি হোক। আকরাম হোসেনের পরিবারও ন্যায়বিচার পাক। পুলিশ যদি এখন সঠিক তদন্ত করে তাহলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বাবুলের প্রভাবের কারণেই তখন আকরামের পরিবার ন্যায়বিচার পায়নি। এখন সঠিক তদন্তের সময় এসেছে। এসব বিষয়ে বাবুল আক্তারের সাথে যোগাযোগ করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেনকে মিতু হত্যা মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারও সিএমপিতে এসে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে দেখা করেন। গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন তত্কালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু।