আলমডাঙ্গা ঘোষবিলায় কুমারনদের শ্মশাণঘাটস্থ সড়কে ভোররাতে ডাকাতচক্রের অপতৎপরতা
আলমডাঙ্গা ব্যুরো/জামজামি প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার ঘোষবিলায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গ্রামবাসীর হাতে বোমাসহ দুই ডাকাত আটক হয়েছে। আটককৃতদের গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আটক দুজন আন্তঃজেলা ডাকাত সিন্ডিকেটের সদস্য বলে আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের একজন কুষ্টিয়ার খোকশার দুর্র্ধষ কিলার ব্লেড জুবায়ের।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার ঘোষবিলা গ্রামের মৃত বদে ফকিরের ছেলে এলাহিসহ কয়েকজন পানবরোজে যায় পান ভাঙ্গতে যান গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরবেলা। সে সময় তারা দুজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে পানবরোজে দেখতে পেয়ে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় আটক করে। পরে তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। তাদের নিকটে থাকা ব্যাগ থেকে ৩টি তাজা বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ৪০ মার্বেল গুটি ও হেঁসো উদ্ধার করা হয়। আটককৃত ২ ব্যক্তির মধ্যে একজনের নাম জুবায়ের (২৫)। সে কুষ্টিয়ার খোকশার ইব্রাহিম আলীর ছেলে। অপরজন রাজবাড়ি জেলার পাংশার উদয়পুরের আমিন সর্দ্দারের ছেলে শাহীন সর্দ্দার (২২)। পরে বোমাসহ আটক দুজনকে আলমডাঙ্গা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আলমডাঙ্গা থানায় নিয়ে উপর্যুপরি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত ২ ডাকাত বহু তথ্য দিয়েছে। তারা স্বীকার করেছে যে, এই ডাকাতদলের নেতা কুষ্টিয়ার খোকশার আমিনুল ইসলাম নামের এক ডাকাত সর্দার। জেলের অভ্যন্তরে তাদের দলের সকলের পরস্পর পরিচয়। গত পরশু বুধবার সন্ধ্যার পর সিএনজিতে তারা কুষ্টিয়া থেকে জামজামিতে আসেন। এই এলাকার দুজন ডাকাত তাদের পূর্ব পরিচিত। তাদের আমন্ত্রণে কুষ্টিয়া থেকে জামজামি এলাকায় আসে তারা। উদ্দেশ্য ছিলো জামজামি এলাকায় গরু চুরি, না হলে ভ্যান অথবা মাইক্রোবাস ছিনতাই। সেই উদ্দেশে ধৃত দুজন ঘোষবিলার পানবরোজে আশ্রয় নেয়। ওই পানবরোজে এলাকার ডাকাতদের জড়ো হওয়ার কথা ছিলো। এরই এক পর্যায়ে ভোররাতে পান ভাঙতে যাওয়া কৃষকদের নিকট ধরা পড়েন এ ২ ডাকাত।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ধৃত জুবায়েরের বিরুদ্ধে খোকশা থানায় একটি হত্যা মামলা রয়েছে। বর্তমানে ওই মামলায় সে জামিনে রয়েছে।
কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, বাড়ি থেকে আনুমানিক ৫শ গজদুরে কুমারনদের শ্মশাণঘাটস্থ সড়কের পাশে রয়েছে তার পানবরজ। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে আযান কানে পৌঁছুতেই তিনি ঘুম থেকে জেগে কামলাসমেত পান ভাঙতে যান। পানবরজের কাছাকাছি পৌঁছে কুমারনদের এ শ্মশাণঘাট সংলগ্ন সড়কে একদল ডাকাতের উপস্থিতি দেখেই তিনি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকেন। তার চিৎকার শুনে আশেপাশের গ্রামবাসী প্রতিরোধে নামে। ডাকাতদলের কয়েক সদস্য সটকে গেলে ও ২ ডাকাত তেড়ে পাকড়াও কার হয়।
এ সময় পানবরজের পাশে রাখা Famous লেখা ১টি কাপড়ের থলেবোঝায় বোমা সাদৃশ্য বস্তু দেখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী আটক যুবকদ্বয়কে উত্তম-মধ্যম দিলেও ধৃত ডাকাতদ্বয় পরস্পর একে অপরকে না চেনার ভান করতে থাকে। জনতা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। গণধোলায়ের একপর্যায়ে গোলগাল গড়নের এ ডাকাত নিজেকে শাহিন বলে পরিচয় দেয়। বাবার নাম আমিন সর্দার বলে জানায়। তার বাড়ি আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া বলে প্রথমে বলে জানায়। পরে অবশ্য সঠিক ঠিকানা দিয়ে বলেছে সে নানাবাড়ি হাটবোয়ালিয়া থাকে। সন্ধ্যারাতে সে হাটবোয়ালিয়া ভ্যানচালক জহুরুলের পাখিভ্যানে একই গ্রামের যুবক শামীম, মিলন ও সালাউদ্দিনের সাথে হরিণাকুণ্ডুর শ্রীপুরে আসে মরা বাড়িতে। প্রশ্ন করা হয় কার বাড়ি, যে মারা গেছে তার সাথে সম্পর্কটাই বা কী? সাথে আসা ৩ যুবকেরা তার কে? মরা বাড়িতে বোমা বহনের কী বা উদ্দেশ্য? এতো উত্তর কোথায় মুখে কলুপ এটে মিথ্যাচার করে ও পার মেলেনি যুবক শাহিনের (২৬)। ডাকাত শাহিনের সঠিক ঠিকানা গ্রাম উদয়পুর, উপজেলা পাংশা, জেলা রাজবাড়ি। শ্রীপুরের জনৈক আলতাফ তাকে নিয়ে এসেছে? প্রশ্ন উঠেছে তবে কি কোনো নাশকতা চালাতে কি তাদের এ বোমাবহন? এই ডাকাতদলের ধৃত অপর যুবক তার পরিচয় দিয়ে বলে তার নাম জুবায়ের (২৫) পিতার নাম ইব্রাহিম আলী, গ্রাম বেতবাড়িয়া, উপজেলা খোঁকশা, জেলা কুষ্টিয়া। জনৈক আলতাফ তাকে ভাড়া করে এনেছে। কেন কী করতে এ ভাড়া? মুখ খোলেনি সে। তবে ধৃত যুবকদ্বয়ের যে একই কাজে ভাড়া খাটতে আসা তা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে এলাকাবাসী।
জুবায়ের সম্পর্কে তার নিজ এলাকায় খোঁজ নিয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, এ যুবক জুবায়ের সন্ত্রাসীচক্রের সক্রীয় সদস্য। ৩-৪ বছর আগে নিজ গ্রামের আজাদ রহমানের শিশুপুত্র লিঙ্কনের (১২) হত্যা মামলার আসামি।
আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের ওসি মো. আকরাম হোসেন জানান, গতকাল ভোরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বোমা সমেত ২ যবক এলাকাবাসীর হাতে পাকড়াও হয়েছে এ খবরে তিনি জামজামি ফাঁড়ি পুলিশের আইসি এসআই বাবুল ও টুআইসি এএসআই জুপিটারসহ সঙ্গীয় ফোর্সদের ঘটনাস্থলে পাঠান। পুলিশ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আটককৃতদের পুলিশি কব্জায় নিয়ে তাৎক্ষণিক আলমডাঙ্গা থানায় হস্থান্তর করে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত থানা কাস্টডিতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত ডাকাত শাহিন ও জুবায়ের শেষ পর্যন্ত স্বীকার করে বলে তারা আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সদস্য। কুমারনদের শ্মশাণঘাট সড়কে তারা পান ব্যবসায়ীদের ঠেকিয়ে তাদের অর্থকড়ি লুটের উদ্দেশে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। পানচাষির চিৎকারে তাদের ৮ সদস্য গাঁ-ঢাকা দিতে পারলেও জনতা তাদের দুজনকে তেড়ে ধরে। দুজন অত্র এলাকার যারা এ ডাকাতদলের সম্পৃক্ত বলে তারা স্বীকারোক্তি দেয়। এ ব্যাপারে আলডাঙ্গা থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
এদিকে, খোকশা এলাকাসূত্রে জানা গেছে, আটক জুবায়ের তার এলাকায় ব্লেড জুবায়ের নামে পরিচিত। ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি তার প্রতিবেশী আজাদ শেখের ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে লিংকনকে মাঠের ভেতর নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
থানাসূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই আটক দুজনকে আদালতে হাজির করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধি প্রদান করে।