গত বছরের ন্যায় এবারও হুইট ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে গমক্ষেত। এই ব্যাপারে কৃষকরা যেমন দিশেহারা, তেমনই এই রোগ দেশের অন্যত্র, এমনকি বিভিন্ন দেশেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, এই বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৬১৯ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে এবং মেহেরপুর জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ করা হয়েছে। এই চাষাবাদ এখন পড়েছে হুমকির মধ্যে। কেননা ছত্রাকনাশক স্প্রে করে কোনো ফল পাওয়া না গেলে শেষপর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত জমির গম জমিতেই পুড়িয়ে ফেলতে হয়। এতে কৃষকের ব্যাপক লোকসান হয়। গত বছর যশোর ও মেহেরপুরসহ ৭টি জেলায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। ফলে চলতি বছরসহ আগামী দুই বছর এ অঞ্চলের কৃষকদের গমচাষে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু তা অমান্য করায় এখন কৃষকদের পড়তে হয়েছে বিপাকে।
দেশে হুইট ব্লাস্ট আবার ছড়িয়ে পড়ার পেছনে কৃষকদের অসচেতনতাই প্রধানত দায়ী। জানা মতে, এই ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত মেহেরপুরের গমক্ষেত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। সেখানে একজন আমেরিকান বিজ্ঞানীও উপস্থিত ছিলেন। মূলত গমের ব্লাস্ট একটি ক্ষতিকর ফাঙ্গাস বা ছত্রাকজনিত রোগ। রোগটি ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম ব্রাজিলে দেখা দেয় এবং পরে ব্রাজিলসহ দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে, আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন সময় প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর গমের জমি ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয় এবং ফলন হ্রাস পায় উল্লেখযোগ্য হারে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এশিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথম বাংলাদেশেই এই রোগ ধরা পড়ে। এতে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ভোলা জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর গমক্ষেত আক্রান্ত হয় যা মোট গম আবাদি জমির প্রায় ৩ শতাংশ। এই রোগের কারণে আক্রান্ত গমের ফলন শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কমে যায়। ক্ষেত্র-বিশেষে কোনো কোনো ক্ষেতের ফসল প্রায় সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়। আক্রান্ত বীজ এবং বাতাসের মাধ্যমে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনুকূল পরিবেশে তা ধারণ করতে পারে মহামারী আকার।
বর্তমানে বাংলাদেশে গমের চাহিদা ৫০ লাখ টনেরও বেশি। অথচ আমরা উত্পাদন করি মাত্র এক-চতুর্থাংশ। এই চাহিদার কারণে সম্প্রতি দেশে শীতকালীন এই ফসলের আবাদ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছিলো। কিন্তু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গমের এই রোগের প্রাদুর্ভাবের পর কৃষকরা কিছুটা হলেও হতাশ। তবে আশার কথা হলো, সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে এই রোগ এখনো পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণেই আছে। এটা এ বছরের গম উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রার (১৪ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন) ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। ব্লাস্ট-আক্রান্ত এলাকায় এই রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকারে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এই ব্যাপারে সরকারি মনিটরিং জোরদার করা দরকার। কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও দরকার ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। সর্বোপরি ছত্রাকনাশক সরবরাহের পাশাপাশি বাড়াতে হবে এই সংক্রান্ত গবেষণাও।