দায়িত্বশীলদের নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন অত্যন্ত জরুরি

সম্পাদকীয়

 

এক সময় দুর্নীতিতে সর্বোচ্চ স্থানটি ছিলো বাংলাদেশের। এখন আর বাংলাদেশ সেই অবস্থানে নেই। অনেকটাই উত্তরণ ঘটেছে। এরপরও যা আছে তাকে সহনীয় পর্যায় বলার সুযোগ নেই। তবে ইউরোপ-আমেরিকায়ও যেখানে দুর্নীতির চিত্র দিনদিন স্ফীত হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান যেটুকু উন্নতি ইতোমধ্যে হয়েছে তা অনেকটা স্বস্তির বিষয়। দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের যে অঙ্গীকার তা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আরো গতিশীল করার মধ্যদিয়ে আমরা পৌঁছুতে পারি কাঙ্ক্ষিত স্তরে। আমাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্র পুষ্ট করতে দুদক যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তাহলে আশা করা যায় অবস্থার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন নিশ্চয়ই হবে। বেশ কয়েকটি অফিস ও সংস্থাকে টার্গেট করেছে দুদক। সরকারের অঙ্গীকার ও দুদকের কঠোর অবস্থানের পরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধুরা এখনো তৎপর।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআরটিএ, রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে অসাধু অপতৎপরতার চিত্র ফুটে উঠেছে ওই প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে এ তথ্যও মিলেছে, দুদক এ ব্যাপারে এখন অধিকতর সক্রিয়। দুর্নীতি প্রতিরোধে তাদের কয়েকটি টিম মাঠপর্যায়ে নামছে। তারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দুর্নীতিগ্রস্ত অফিস ও সংস্থাকে টার্গেট করেছে। এর পাশাপাশি বেশ কিছু সরকারি কর্মকর্তাকেও টার্গেটের জন্য তারা জাল বিছিয়েছে। আমরা দুদককে এমন তৎপরতার জন্য অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক পরিস্থিতি নিয়ে এখনো বিতর্ক আছে। এ ব্যাপারে সরকারের বক্তব্য এবং যারা দুর্নীতি পর্যবেক্ষণ করেন এমন পর্যবেক্ষকদের বক্তব্যের মধ্যে বিস্তর ফারাকও পরিলক্ষিত হয়। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াও গতিশীল এও অসত্য নয়। দীর্ঘদিনের পুরোনো এই ব্যাধি দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলতে এখনো জরুরি কিছু কাজ অসম্পন্ন রয়ে গেছে। এই কাজগুলো সম্পন্নকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সবার নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। এ কথাও অসত্য নয় যে, দেশের অনেক মানুষ আন্তরিকভাবেই মনে করেন দুর্নীতির মূলোৎপাটনে সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই। সরকারের দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের প্রতি মানুষের ইতিবাচক আস্থার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে সরকারের প্রতি আস্থা থাকাটা দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। দুর্নীতি নির্মূলে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতাকে দেশের উন্নয়নের প্রয়োজনীয় মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে এ জন্য সংসদে আসা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও বিশেষ ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে আরো সজাগ থাকতে হবে। দুর্নীতি নামক ব্যাধি একটি রাষ্ট্র ও সমাজকে কিভাবে কুরে কুরে খায়, কিভাবে অর্জনের বিসর্জন ঘটায়, কত রকম ক্ষত সৃষ্টি করে, সম্ভাবনার পথ রুদ্ধ করে দেয়, রাষ্ট্র ও সমাজের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র কতো স্ফীত করে এবং এসবের বহুমুখী বিরূপ প্রভাব কতোটা উৎকট হতে পারে এমন দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে আছে। রাজনৈতিক স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা-দায়বদ্ধতা এবং অঙ্গীকারের যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে এই ব্যাধির অন্যতম দাওয়াই। দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের অঙ্গীকার এবং দুদকের যে অবস্থান রয়েছে তা আরো দৃঢ় করতে হবে। এমনটি করতে পারলে দুর্নীতি নামক ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া দুরূহ নয়। যেখানে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ স্থান নিয়েছিলো সেখান থেকে উত্তরণের পর বর্তমান পর্যায়ে আসার বিষয়টি এরই সাক্ষ্যবহ। দুর্নীতি প্রতিরোধে দরকার দেশপ্রেম। আরো দরকার সব ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা-জবাবদিহিতার পাঠ পোক্ত করা। অস্বচ্ছতাসহ সব ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড রোধে সামাজিক সচেতনতার বিষয়টিও সমভাবেই জরুরি। দুর্নীতি যে কোনো মূল্যে নির্মূল করতেই হবে। দূর করতে হবে সব ধরনের অনাচার। যারা রাষ্ট্রে ও নাগরিকদের ওপর দুর্নীতির থাবা বসাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে আরো কঠোর প্রতিকারে নিষ্ঠ হওয়ার মধ্যদিয়েই যেমন নিশ্চিত হতে পারে উপযুক্ত দাওয়াই তেমনি কাঙ্ক্ষিত সমাজ ব্যবস্থার বাস্তবায়নও।