স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত । এদিকে জেলার তিনটি উপজেলার ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধার সম্মানিভাতা গত অক্টোবর মাস থেকে স্থগিত এবং একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হতে নতুন আবেদন জমা পড়েছে ২২৬৬টি।
দামুড়হুদা উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হওয়া ভুয়া ব্যক্তি হলেন- দর্শনা পৌর এলাকার মিলপাড়ার মৃত ফরমান আলীর ছেলে জামাত আলী। দামুড়হুদা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন জানান, উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এসব করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হতে চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় ৬০০, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৯৬৬, দামুড়হুদা উপজেলায় ৫০০ এবং জীবননগর উপজেলায় ২০০ জন আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে সম্মানিভাতা স্থগিত হওয়া তিন উপজেলার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরে ৫ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২২ জন এবং দামুড়হুদা উপজেলায় ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। জীবননগর উপজেলায় একজনেরও সম্মানিভাতা স্থগিত হয়নি। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় স্থগিতকৃত ৫ মুক্তিযোদ্ধা হলেন চুয়াডাঙ্গা পৌর এলকার হাজরাহাটির মৃত আবু তালেব সিদ্দিকীর স্ত্রী মোমেনা বেগম, বড়সলুয়া গ্রামের মৃত বাবর আলীর স্ত্রী ছবিরন খাতুন, চুয়াডাঙ্গার ফার্মপাড়ার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে আব্দুল মালেক, ছোটসলুয়া গ্রামের মৃত হাজি কলিম উদ্দিনের ছেলে ইছাহক আলী এবং চুয়াডাঙ্গা সুমিরদিয়ার মৃত ছাদি শেখের ছেলে হারেজ আলী ।
আলমডাঙ্গা উপজেলায় স্থগিতকৃত ২২ মুক্তিযোদ্ধা হলেন- এনায়েতপুর গ্রামের মৃত মইনুদ্দিনের স্ত্রী মোছা. ইশারন, নতিডাঙ্গা গ্রামের ওসমান মণ্ডলের ছেলে বজলুর রহমান, খাসকররা গ্রামের মৃত নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন, বড়বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত মেহের আলীর ছেলে কায়েস আলী, পাইকপাড়ার মৃত ওয়ারেশ জোয়ার্দ্দারের ছেলে নজরুল ইসলাম, কায়েতপাড়ার মৃত ইয়াকুব আলীর স্ত্রী ওজুফা খাতুন, শ্রীরামপুরের মৃত দিদার আলী মুন্সির ছেলে বাহার আলী,বড় গাংনী গ্রামের মৃত মুনসুর আলীর স্ত্রী রাবেয়া খাতুন, হারদী গ্রামের মৃত লালচাঁদ মণ্ডলের ছেলে আব্দুল বাখের, বাড়াদী গ্রামের মৃত আমিরুল ইসলামের স্ত্রী শিউলি খাতুন, গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত আক্কেল আলীর ছেলে দাউদ আলী, বণ্ডবিল গেটের মৃত রাহেন মণ্ডলের ছেলে আকমত মণ্ডল, আলমডাঙ্গা থানাপাড়ার খোন্দকার মোতাহারুল ইসলামের স্ত্রী আসগারী বেগম, ভাংবাড়িয়া গ্রামের মৃত নিজাম উদ্দিন জোয়ার্দ্দারের ছেলে আবু বকর সিদ্দিক, হারদীর মৃত গোলাম রসুল বিশ্বাসের ছেলে নুরুল ইসলাম, শালিকা গ্রামের মৃত হারুন খানের ছেলে ইউনুস আলী, মোচাইনগরের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে জাফর বিশ্বাস, জগন্নাথপুরের মৃত জেহের আলী মণ্ডলের ছেলে কোরবান আলী, পারকুলা গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে জামাল উদ্দিন, ওসমানপুরের মৃত খন্দকার মকছেদ আলীর ছেলে সিপাহী রেজাউল আলম ও আলমডাঙ্গা থানা পাড়ার আহমেদ আলী মল্লিকের ছেলে আবুল কাশেম। দামুড়হুদা উপজেলার ঠাকুরপুরের মৃত রহিম বক্সের ছেলে আব্দুল হামিদ, ঈশ্বরচন্দ্রপুরের মৃত জেহের আলীর ছেলে মুনসুর আলী, কুড়ুলগাছি মৃত ফকির হালসনার ছেলে মো. হানেফ, নাপিতখালী গ্রামের মৃত নুর মহাম্মদের ছেলে মাহবুব হোসেন, দামুড়হুদার মৃত মোজাম্মেলের ছেলে আবু বকর সিদ্দিক ও ইসলাম বাজার দর্শনার মৃত ইসাহাক আলীর ছেলে খাজা আবুল হাসনাত।
আলমডাঙ্গা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু তালেব জানান, উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি ২২ জনের নাম স্থগিত করায় তাদের ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল সামী জানান, উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ওই পাঁচজনের ভাতা স্থগিত করা হয়েছে।
জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক আতিয়ার রহমান জানান, সম্মানিভাতা প্রাপ্ত ৩৩ মুক্তিযোদ্ধা প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পেতেন। গত অক্টোবর থেকে এই ভাতা প্রদান বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে জেলার চার উপজেলার ১ হাজার ৪৫৮ জন সম্মানি ভাতা পাচ্ছেন।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু হোসেন জানান, গত ২১ জানুয়ারি থেকে আবেদনকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। আলমডাঙ্গায় চলছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ২৮ জানুয়ারি জীবননগর, ১১ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলায় ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দামুড়হুদা উপজেলায় যাচাই-বাছাই হবে। উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি হিসেবে চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গায় স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার এমপি, দামুড়হুদা উপজেলায় জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন ও জীবননগর উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত উল্লাহ দায়িত্ব পালন করবেন। সদস্য সচিব হিসেবে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা এবং উপজেলা কমিটিতে মোট ৭ জন করে যাচাই-বাছাই কমিটির দায়িত্ব পালন করবেন। এইসব আবেদনকৃতরা ২০১৪ সালে অনলাইনে আবেদনপত্র জমা দেন।