নৈশকোচের ষোড়শী যাত্রীকে ধর্ষণ অপচেষ্টার অভিযোগ গুরুতর। তাও আবার যাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার দায়িত্বে যে ব্যক্তি তার বিরুদ্ধেই এ অভিযোগ। অবশ্য অপর যাত্রীরা দৃশ্য দেখে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদই শুধু করেননি, উত্তমমধ্যমও দিয়েছেন। পুলিশে নালিশও করেছেন। মূল অভিযুক্ত রয়েল এক্সপ্রেসের ওই নৈশকোচের সুপারভাইজার চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার ইব্রাহিমপুরের মিল্টন পুলিশের দৃষ্টিতে পলাতক। চালক ও চালকের সহযোগীকে ঢাকার গাবতলী দারুস সালাম থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী এ দুজনকে পুলিশি রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালালেও সুপারভাইজার রয়েছে আত্মগোপনে।
একটি কোচের চালক ও চালকের সহযোগী তথা হেলপার সাধারণত নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছুনোর চেষ্টা করেন। গাড়ি চালানোর কাজেই মূলত ব্যস্ত থাকতে হয় চালককে। ধষর্ণ অপচেষ্টাই হোক আর যৌন হয়রানিই হোক ঘটনাটি যদি ঘটিয়েই থাকে তাহলে সুপারভাইজার। তাহলে চালক ও চালকের হেলপারকে গ্রেফতার করা হলো কেন? পুলিশের যুক্তি, ওই সুপারভাইজারের সহযোগী ওরা। এদিকে অভিযুক্ত সুপারভাইজার পালালেও চুয়াডাঙ্গায় ফিরে বিষপানে আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালিয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, গতকাল সকাল হওয়ার আগেই হাসপাতাল থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে তাকে। সম্ভবত গ্রেফতার এড়ানোর জন্যই এমনটি করা হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, যে কিশোরী বা যুবতীর যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে বলে ওই কোচের যাত্রীদের অভিযোগ, সেই ষোড়শী মানসিকভাবে সুস্থ নয়। তার পিতাও এ বিষয়টি অস্বীকার করেননি। তিনিই বলেছেন, বাড়ি থেকে সে নিরুদ্দেশ হয়ে। ভাগ্যিস তাকে ফিরিয়ে পেয়েছি। তাছাড়া তাকে যারা টাকা তুলে ওই কোচে তুলে দেন তাদেরও ধারণা ওই যুবতী মানসিকভাবে অসুস্থ। শুক্রবার দুপুরে ট্রেনের পিছু নেয়া দেখে কয়েক যুবক তাকে তাদের হেফাজতে নেয়ার পর চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার এক নারীর নিকট তাকে রাখা হয়। নিজেরা টাকা তুলে টিকিটের মূল্য পরিশোধের পাশাপাশি কিছু খরচের টাকাও গুছিয়ে দেয়া হয় তার হাতে। চলন্ত কোচের যাত্রীরা এমন কি দেখলেন যে সাথে সাথে সুপারভাইজারকে কোচের মধ্যেই মারতে শুরু করলেন।
অভিযোগ উত্থাপন মানেই যেমন অভিযুক্তকে দোষী ধরে নেয়া সভ্য সমাজের কাজ নয়, তেমনই একজনের অপরাধের জন্য অন্যদের হয়রানিও অনাকাক্সিক্ষত। চলন্ত কোচে কি ঘটেছে তা যাত্রীরই ভালো বলতে পারবেন। সুষ্ঠু স্বচ্ছ তদন্ত কাম্য। অন্যায়ের মাত্রা বুঝে দোষীর শাস্তি আইনের দৃষ্টিতে নিশ্চিত করতে পারলে অবশ্যই অপরাধ প্রবণতা হ্র্রাস পাবে। অন্যথায় তা সংক্রমিত হওয়া অমূলক নয় যেমন, তেমনই অন্যায় না করে হয়রানির শিকার হলে আইন প্রয়োগকারীর ওপর আস্থাহীনতা বাড়ে। ফলে তদন্ত কর্তাকে হতে হবে চৌকস। তার আগে গুরুদায়িত্ব পালনকারীকে পরিহার করতে হবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আচরণ, মানসিকতা।