গাংনীতে পুলিশ ভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেল চালক আতিয়ার নিহত

গাংনী প্রতিনিধি: ইচ্ছে ছিল ধূমধাম করে একমাত্র কনের বিয়ে দেবেন। আগামী শনিবার বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য চলছিলো আয়োজন। জামাইয়ের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে পারলেই স্বস্তি। বিয়েতে আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দিতে দু দিন থেকে ছুটছিলেন ইটভাটা ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমান। এই ছুটে চলায় যে তার শেষ চলা হবে তা কেই বা জানতেন। পুলিশ পিকআপ ভ্যানের চাপায় তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এ দুর্ঘটনা ঘটেছে গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চেংগাড়া নামক স্থানে। নিহত আতিয়ার রহমান গাংনী উপজেলার কষবা গ্রামের মৃত মোশাররফ হোসেনের ছেলে ও কষবার হিরা বিক্সের স্বত্বাধিকারী।
নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জোড়পুকুরিয়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন আতিয়ার রহমান। চেংগাড়া গ্রামের মাঠের মধ্যে পৌঁছুলে বিপরিত দিক থেকে আসা গাংনী থানা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে পুলিশ সদস্যরা গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আতিয়ার রহমান একটি বাসের পিছু পিছু যাচ্ছিলেন। বিপরীত দিক থেকে আসা পুলিশ পিকআপ ভ্যানটিকে সাইড দিতে বাসটি রাস্তার বামের দিকে সরে যায়। এ সুযোগে বাসটি টপকে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করেন আতিয়ার। এতেই ঘটে বিপত্তি। পুলিশ পিকআপভ্যানটির সামনে পড়ায় চালক কড়া ব্রেক করেও দুর্ঘটনা এড়াতে পারেননি। এদিকে হাসপাতাল থেকে মরদেহ নেয়া হয়েছে কষবা গ্রামের বাড়িতে। আজ সোমবার সকাল নয়টায় স্থানীয় কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হবে। দুর্ঘটনার বিষয়ে কোন মামলা-মোকর্দ্দমা করবে না পরিবার। তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি চেয়েছেন তারা।
গাংনী থানা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, নিহতের পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে তিনি কষবা গ্রামে গিয়েছিলেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার একমাত্র কন্যা গাংনী সরকারী ডিগ্রি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী আফসানা খাতুনের বিয়ের দিন ঠিক হয় আগামী শনিবার। বড় ভাইয়ের জামাইকে বিয়ের দাওয়াত দিতে জোড়পুকুরিয়া গ্রামে গিয়েছিলেন আতিয়ার। এ ঘটনায় পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া বিরাজ করছে।
নিহতের বড় ছেলে রাজশাহীর একটি কলেজে এইচএসসির ছাত্র এবং ছোট ছেলে ভাটপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার ছোট ভাই ডা. আলী হায়দার ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে কর্মরত। আলী হায়দারসহ আত্মীয়-স্বজনদের এক নজর দেখার সুযোগ দেয়ার জন্য আজ সকালে দাফনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানায় পরিবারিক সূত্র।