সোনা পাচারে ভাড়া হচ্ছে পাকস্থলি : অর্থের লোভে মূল্যবান জীবন নিয়ে ছিনিমিনি

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক ও গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির কারণে সোনা পাচারের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠছে পাচারকারিরা। এই কাজে লোক ভাড়া করছে তারা। অর্থের লোভে নিজেদের মূল্যবান জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে পাচারকারিদের ভাড়াটেরা। অন্য দেশে গিয়ে চোরাচালানের সোনার বার বিশেষ কায়দায় পায়ুপথ দিয়ে ঢুকিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে পাকস্থলীতে। এরপর যাত্রীবেশে সেই দেশ থেকে বিমানে চড়ে বাংলাদেশের বিমানবন্দরের বাইরে এসে এগুলো বের করে দিলেই মিলছে ভাড়ার টাকা।

গত ৮ মাসে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের সোনা চোরাচালান ধরা পড়েছে এক ডজনের বেশি বার। সর্বশেষ গতকাল শনিবার জোবায়ের আক্তার (৫০) নামের এক যাত্রীর পেট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৫টি সোনার বার। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সোনা পাচারের এই নির্মম কায়দার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানান, অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিয়মিত পাকস্থলিতে করে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে সোনা নিয়ে বাংলাদেশে আসছে। ঢাকা কাস্টমস হাউসের প্রিভেনটিভ টিমের প্রধান ও সহকারী কমিশনার এইচএম আহসানুল কবির বলেন, পাকস্থলিতে করে সোনা আনলে সহজে স্ক্যানিং মেশিনে ধরা পড়ে না। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে পাচারকারীরা। তবে ইতঃপূর্বে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা সফলভাবে হাতেনাতে ধরতে পারায় আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখন আমরা পাকস্থলিতে সোনা বহনকারীদের খুব সহজেই শনাক্ত করতে পারি। তিনি বলেন, শনিবার আটক বিমানযাত্রী জোবায়েরের বাড়ি নড়াইলে। তার পাসপোর্টে দেখা যায় তিনি প্রতি মাসেই একবার করে মালয়েশিয়া অথবা সিঙ্গাপুরে যাতায়াত করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন, প্রতিবারই তিনি পায়ুপথে সোনা ঢুকিয়ে চোরাচালান করেছেন। প্রথম দিকে সোনার বারের সংখ্যা থাকতো ৬ থেকে ১০টির মধ্যে। তবে শনিবার তার পাকস্থলি থেকে বের করা হয়েছে ১৫টি সোনা বার। যার মূল্য পৌনে এক কোটি টাকা।

এই পাচারকারিকে কীভাবে ধরলেন এ ব্যাপারে আহসানুল কবির বলেন, ওই যাত্রী সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছান। গ্রিন চ্যানেল দিয়ে অতিক্রমকালে তাকে থামিয়ে দেয়া হয়। সোনা আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। পরে তার এক্সরে করার পর সোনার অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এরপর তাকে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করানো হয়। এরপর পাকস্থলি থেকে সোনার বারগুলো বের হয়ে আসে। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে। ওই যাত্রীকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের পরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, এভাবে সোনা পাচার করলে যেকোনো সময় মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বহনকারীদের চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায়। মুখাবয়ব ফ্যাকাশে হয়ে যায় । হাঁটা চলা করে স্বাভাবিক ভাবে।

ঘাম দেখে শনাক্ত: এক কাস্টমস কর্তকর্তা জানান, গত বছর ৪ জুন খুব ভোরে বিমানের একটি ফ্লাইটে করে  মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকায় আসেন কুমিল্লার কামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। বিমান থেকে নামার পর তিনি প্রচণ্ড ঘামছিলেন। এতে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। তাকে এক্সরে করার পর ধরা পড়ে পায়ুপথে সোনা আছে। এরপর প্রচুর পানি পান করানোর পর বের করে দেন ৪০ লাখ টাকা মূল্যের সোনা বার। এ ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে ধরা পড়ে কুয়ালালামপুর থেকে আসা যাত্রী খোরশেদ আলম। তার চোখের নিচে ছিলো কালো দাগ। শুল্কযোগ্য কোনো পণ্য লুকানো আছে কি না জানতে চাইলে ভদ্রলোক কর্মকর্তাদের ওপর রেগে যান। তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ঘাবড়ে দেয়ার জন্য তাদের নাম, পদবি জিজ্ঞাসা করে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন। তবে পরে তিনি কাবু হন। একই পদ্ধতিতে তার পেট থেকে উদ্ধার করা হয় ১০টি সোনা বার। এছাড়া গত বছর ৩১ জুলাই দুবাই থেকে আসা যাত্রী কাজী রফিকুল ইসলামের পাকস্থলি থেকে বের করা হয় ৬০ লাখ টাকার সোনার বার। তিনি পায়ুপথে একাধিকবার সোনা পাচার করেছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। এছাড়া আরো অনেকে একই কায়দায় সোনা পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। তারপরেও পাচারকারীদের ভাড়াটে খুঁজতে বেশি বেগ পেতে হচ্ছে না।