ঠেকাতে হবে শিক্ষকসমাজের নৈতিকতার স্খলন

রাজায় রাজায় যুদ্ধ হলে শিক্ষকে শিক্ষকে মারামারি হবে না কেন? না, আমরা সবাই রাজা হলেও শিক্ষককে মারামারি বা হাতাহাতি করা মানায় না। শিক্ষক যখন সকলের অনুকরণীয় তখন তাকে যেমন হিংসাত্মক হওয়া চলে না, তেমনই শিক্ষকের পেশিশক্তি প্রয়োগ মেনে নেয়া যায় না। এরপরও কেন শিক্ষকের ওপর শিক্ষকের হামলা বা বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে তাদের মারামারি? শুধু স্বার্থান্ধতাই নয়, ঘটনার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে ক্ষমতার দাপট। কেননা, শিক্ষকরা এখন আর শুধু শিক্ষক নন, রাজনীতিকও। রাজনীতির নানা রঙে শিক্ষকদের বিভক্তিকরণ জাতির জন্য বড্ড ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জীবননগর উপজেলার মিনাজপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের ওপর অপর শিক্ষকের হামলার ঘটনার কয়েক দিনের মাথায় একই উপজেলার রায়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পড়ে থাকা পুরোনো পুস্তক বিক্রির টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে গতপরশু বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের শিক্ষক দফতরেই নিন্দনীয় এ ঘটনা ঘটে। সহকারী শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুধু তদন্তই নয়, উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে শিক্ষক সমাজের নৈতিকতার স্খলন উলকাপি-ের গতি পাওয়া অমূলক নয়। কেননা, ওটাও তো সংক্রামক। রায়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকদের বিরোধ শুধু কিছু পুরোনো পুস্তক ও খাতা বিক্রির মাত্র ৭ হাজার টাকা নিয়েই নয়, রাজনৈতিক সুবিধাভোগের বিষয়টিও জড়িয়ে রয়েছে হাতাহাতির সাথে।
জীবননগর মিনাজপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নে নববর্ষের সভায় একজন শিক্ষকের ওপর অপর শিক্ষকের নগ্ন হামলা বিরূপ সমালোচনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একই উপজেলার রায়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকের হাতাহাতির খবর পত্রস্থ হওয়ার পর সঙ্গত প্রশ্ন, শিক্ষকদের মধ্যে কেন এতো উগ্রতা? ক্ষমতার দাপট কি তবে তাদের হিতাহিত জ্ঞানটাকেও কেড়ে নিয়েছে? নিয়েছেই তো। রায়পুরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৩ সহকারী শিক্ষকের মধ্যে ১১ জন একাট্টা হয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। বলেছেন, রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে কয়েকজন সিনিয়রকে ডিঙিয়ে তিনি প্রধান শিক্ষক হয়েছেন। পক্ষান্তরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, সহকারী শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে চরম স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখিয়ে ওনারা যা খুশি তাই করছেন।
দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই যখন নীল লাল শাদা রঙে বিভক্ত তখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সেই রঙের ছটা পড়া অমূলক নয়। ভাগ্যিস প্রাথমিকে এখনও তার তেমন বহির্প্রকাশ ঘটেনি। রাজনৈতিক বিভক্তিকরণ ও ক্ষমতা হিং¯্রতাকে আরও ভয়ানক করে তোলে যখন তার মধ্যে থাকে স্বার্থান্ধতা। শিক্ষকম-লীকে কি ওরকম হওয়া সাজে? শুধু জীবননগরের রায়পুর বা মিনাজপুরেই নয়, দেশের অধিকাংশ এলাকাতেই শিক্ষকদের বিভক্তিকরণ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। রায়পুর রয়েছে এগিয়ে। দ্রুত তদন্ত করে স্বচ্ছতার সাথে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে বিভক্তিকরণের সুতোই পড়বে টান, উপকৃত হবে জাতি।