শরিফুল ইসলাম/আতিক বিশ্বাস: শীত আসলেই ফুটপাতে পিঠা বিক্রির ওপর আলমডাঙ্গার রাধিকাগঞ্জের হারুন মোল্লার পরিবার নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই শীতে ফুটপাতের পিঠাওয়ালারা ভদ্র ঘরের অভিজাত গৃহিণীদের মুক্তি দিয়েছে পিঠা তৈরির নানা ঝক্কিঝামেলা আর কষ্ট থেকে। একটা সময় ছিলো যখন প্রত্যেক বাড়িতেই এমন শীত মরসুমে মা-চাচি-দাদিরা লেগে পড়তেন পিঠা বানাতে। বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। এ পার্বণগুলোর অন্যতম পৌষপিঠা। এমনিতে খাদ্য রসিক বাঙালির প্রত্যেক পার্বণের সঙ্গেই খাওয়া-দাওয়া অপরিহার্য হলেও পিঠা পাব্বনের কাছে তা নিতান্তই শিশু। পৌষ শেষের এই পিঠা খাওয়ার ধুম নিয়ে তাই বাঙালি স্বাদে আহ্লাদে আটখানা। কিন্তু সে সব দিন আর নেই। তবে এখনও কম বেশি শীতে সবার ঘরে নানান রকম পিঠা তৈরি হয়। পরিবারের সবাই এই পিঠা খেতে বেশি পছন্দ করেন। গ্রাম থেকে শহর- এই পিঠার চাহিদা সবার নিকট সমান। এই পিঠা তৈরি করতে প্রয়োজন হয় নানান ধরনের উপকরণ, তার সাথে প্রয়োজন হয় অভিজ্ঞতারও। অন্য সব খাবারের মত এ পিঠা সহজেই তৈরি করা যায় না। সংসারের হাল ধরার জন্য শীতকে কাজে লাগাচ্ছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের প্রায় ১৮/২০ নারী-পুরুষ। শহরের রেলস্টেশনের সামনে, লালব্রিজ মোড়ে, কালিদাসপুর সাদাব্রিজের দু পাশে, হাফিজ মোড়ে, চারলা মোড়, আনন্দধাম ব্রিজের নিকট, চাতালমোড়, গোবিন্দপুর মোড়, উপজেলামোড়,আল তাইয়েবামোড়সহ হাইরোডের বিভিন্ন স্থানে তারা পিঠা বিক্রি করে থাকে। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষেরা এ পিঠা কারিগর। পিঠার দোকান সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। এসব ভাসমান পিঠার দোকানের অধিকাংশ মালিকরাই হলো হতদরিদ্র। অনেকেই দিনের বেলা অন্য কাজ করে রাতে পিঠা বিক্রি করেন। সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে এ ব্যবসায় বাড়তি শ্রম বিনিয়োগ করছে। রিকশা-ভ্যানচালক, অটোচালক, দিনমজুর, শিশু-কিশোর, চাকরিজীবি, দোকানদার ও ছাত্ররা হচ্ছে এসব পিঠার দোকানের প্রধান ক্রেতা। এছাড়াও এমন অনেক স্বচ্ছল ব্যক্তিও রয়েছেন যারা চাকরি করে বাসায় ফেরার পথে পিঠা কিনে বাড়িতে নিয়ে যান। কেউ বা আবার নতুন বউয়ের জন্য কিংবা বৃদ্ধ বাবা-মার জন্য নিয়ে যান। রাত সাড়ে ১০টা হবে। তীব্র শীতে পিঠা কিনছেন হারদীর রফিকুল ইসলাম। এতো রাতে পিঠা কেনার মোজেজা কী জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, বাড়িতে যদি পিঠার চল পুরোপুরি বাদের খাতায় গিয়ে থাকে, তাহলে দেরি না করে আপনিও চলে আসুন এখানে। পিঠা খেলে, তবে না পেটে সইবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পিঠা বিক্রেতা হারুন মোল্লা সাথে কথা বলে জানা যায়, সে প্রতিদিন ৩শ থেকে ৪শ ভাপাপিঠা বিক্রি করে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা লাভ করেন। এ ব্যবসার পূর্বে ভ্যানগাড়ি চালাতেন। এখন সে অর্ধবেলা ভ্যানগাড়ি এবং বেলা ৪টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পিঠা তৈরি কাজ করেন। উভয় কাজ করে তিনি প্রতিদিন গড়ে ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা লাভ করেন। তিনি বেশ কয়েক বছর এ পিঠা তৈরি ও বিক্রি করছেন। কথা বলতে বলতে আবেগতাড়িত হয়ে তিনি বলেন, আমি শুধু চেয়ে থাকি কখন শীত আসবে আর শীত আসলে আমার হাতে আসবে টাকা। শীতের এই বাড়তি রোজগার থেকে তিনি কিছু অর্থ জমাতে পারেন।