আগামীকাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ : জমছে না এবারের ভোট

কেরুজ শ্রমিককর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন ২১ জানুয়ারি

 

দর্শনা অফিস: কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন বরাবরই আলোচিত হলেও এবার জমছে না ভোটের মাঠ। ভোটের আর মাত্র ৭ দিন বাকি থাকলেও প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে তেমন তোড়জোড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ঝিমিয়ে রয়েছে নির্বাচনের মাঠ। সন্ধ্যায় সংগঠনগুলোর পক্ষে মিছিলের মহড়া দেখা গেলেও সারাদিন কাটে নিস্তব্ধতার মধ্যেই। কোনো সংগঠন কার্যালয় এবার সাজানো-গোছানো হয়নি। কেরুজ আঙিনা এবার রঙিন হয়নি ছবি সংবলিত রং-বে-রঙের ডিজিটাল ব্যানার ও ফেস্টুনে। কেরুজ এলাকা পোস্টারে পোস্টারে মুড়িয়ে দেয়া হয়নি এবারের নির্বাচনে। দিনভর কর্মী-সমর্থক ও বহিরাগতদের ভিড় দেখা মিলছে না সংগঠনগুলোতে। প্রার্থীদের দৌড়-ঝাঁপ যেন খানেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। স্মরণকালে রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে এবারের নির্বাচনের প্রচারভিযান। অনেকেই বলেছেন, এবার কমিটি পরিসর কমে যাওয়ায় নির্বাচনের মাঠ চাঙ্গা হচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, উল্টো কথা। তারা বলেছেন, নির্বাচনের মাঠ চাঙ্গা করে থাকে ওয়ারহাউজের (বিক্রয় কেন্দ্র) এজেন্টদের টাকায়। এবার সে গুড়ে নাকি বালি পড়েছে। প্রকাশ্যে টাকা খরচের ঘটনা এবার হয়তো নাও ঘটতে পারে। শ্রমিকনেতাদের হাত থেকে ওয়ারহাউজে এজেন্ট বদলির সুপারিশ ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব করা হয়েছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের কর্মকর্তারা এবার শক্ত হাতে দেখভাল করছেন। ফলে এজেন্টদের দেখা যাচ্ছে না নির্বাচনের মাঠে। ভোটের শেষ রাত পর্যন্ত যদি এমনটি চলে, তবে হয়তো এবারের নির্বাচন স্মরণকালের সব রেকর্ড ভাঙবে।

জানা গেছে, কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন আলোচিত হওয়ার পেছনের রহস্য শুধুই অর্থ। বিগত নির্বাচনগুলোতে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে যেন নতুন ইতিহাস। অর্থ জোগানের মূল ভূমিকা থেকেছে চিনিকলের ১৩টি মদ বিক্রয় কেন্দ্রের এজেন্টরা। মূলত নির্বাচনের মাঠ চাঙ্গা রাখতে এজেন্টদের সুনজরের অপেক্ষার প্রহর গুনতে হতো প্রার্থীদের। ইউনিয়নের অন্যান্য পদের ক্ষেত্রে তেমন সাড়া না পেলেও বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ক্ষেত্রটাই যেন আলাদা। বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে বদলি বাণিজ্য অন্য রকম এক আতঙ্কের নাম। সবচেয়ে বড় বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্ব নেয়ার জন্যই যেন যতো খরচ। মদ বিক্রয় কেন্দ্রের এজেন্টতো দূরের কথা পিয়ন হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া যেন হাতে আলাউদ্দিনের আশ্চার্য প্রদীপ পাওয়ার মতো। রাতারাতি ধন-সম্পদের মালিক বনে যাওয়া যেন কোনো স্বপ্ন নয় বাস্তবেরই আরেকটা সহজ উপায়। এছাড়া বিক্রয় কেন্দ্রের এজেন্টগুলোর সাথে ক্ষমতাসীন শ্রমিক নেতাদের মাসিক হিসেব-নিকেশতো বাধ্যতামূলক। ইতঃপূর্বে বিক্রয় কেন্দ্রে এজেন্ট বদলি সংক্রান্ত কারণে মিলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে একজন শ্রমিক নেতার হাতাহাতির ঘটনা। হয়েছে মামলা। ওই ঘটনায় সে সময়ের ক্ষমতাসীন একজন শ্রমিক নেতার ঘটেছে চাকরি হারানোর ঘটনাও ঘটেছে। তাছাড়া রয়েছে নিয়োগ বাণিজ্য। কোটাভিত্তিক নিয়োগের অনেকটাই বাইরে চলে যেতে হয় কোনো কোনো পদস্থ নেতাকে। চাকরি কবে হবে, তা দেখার দরকার নেই, আগে-ভাগে পরিপূর্ণ হিস্যা গ্রহণ করাটা অনেক পুরোনো অভ্যাস। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীরা পরাজয়ের পরও মাঠ ছাড়েন না। ভোটের পর দিন থেকেই শুরু হয় নির্বাচনের মাঠ তৈরি করা। একজন শ্রমিক নেতাকে পুরো দু বছর ধরে পুষতে হয় ভোটারদের। কেরুজ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ২৫ সদস্যের স্থলে পরিবর্তন করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ নির্বাচনে ২ জন ২ জন ৪ জনের স্থলে ১ জন ১ জন করে ২ জন সহসভাপতি ও সহসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার বিধান করা হয়েছে। ওয়ার্ডগুলো একত্রিত করে ৭টি করা হয়েছে। ৭টি ওয়ার্ডে ৯ জন সদস্য পদে নির্বাচিত হতে পারবেন। ফলে ১ জন সভাপতি, ১ জন সহসভাপতি, ১ জন সাধারণ সম্পাদক, ১ জন সহসাধারণ সম্পাদক ও ৯ জন সদস্যের সমন্বয়ে নির্বাচিত হবে ১৩ সদস্যের কমিটি। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে রয়েছেন, বর্তমান সভাপতি তৈয়ব আলী, গত নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত সভাপতি প্রার্থী ফিরোজ আহেমদ সবুজ, সাবেক সভাপতি হাফিজুল ইসলাম ও সাবেক সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক পদে মাঠে রয়েছেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স ও সদস্য আত্মপ্রকাশ করা সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী, সাবেক যুগ্মসম্পাদক ইসমাইল হোসেন। এছাড়া আতাউর রহমানের নাম শুরুর দিকে শোনা গেলেও বর্তমানে নির্বাচনের মাঠে দেখা যাচ্ছেনা। তবে আগামীকাল সোমবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পরই বোঝা যাবে। সহসভাপতি পদে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন- বর্তমান সহসভাপতি ফারুক আহেমদ, রেজাউল ইসলাম ও জুলফিকার হায়দার জুলু। সহসাধারণ সম্পাদক পদে নাম শোনা যাচ্ছে- খবির উদ্দিন, ইদ্রিস আলী, বাবুল আক্তার, (উৎপাদন) খলিলুর রহমান, বাবুল আক্তার (গ্যারেজ) ও শাহীন আলম। ৭টি ওয়ার্ডের ৯ জন সদস্য পদে প্রার্থীর সংখ্যা কমপক্ষে ৩০ জন। এ নিবার্চনে সাধারণ সম্পাদক পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথা না শোনা গেলেও সভাপতি পদে দ্বিমুখি তুমুল লড়াইয়ের কথা শ্রমিক-কর্মচারীদের মুখে মুখে। এবারের নির্বাচনে কমেছে ভোটার সংখ্যা। গত নির্বাচনে কেরুজ চিনিকলের হিসাব, প্রসাশন ভাণ্ডার, স্বাস্থ্য বিধান, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাইমদ কারখানা, ডিস্টিলারি, বিদ্যুত ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগসহ বাণিজ্যিক খামারগুলোর শ্রমিক-কর্মচারী ১ হাজার ২৫৮ জন ভোটার থাকলেও এবার ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ১৪০ জন। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান, চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মোশারফ হোসেন, সদস্য সচিব, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আকুল হোসেন, সদস্য আক্রাম হোসেন শিকদার, আব্দুল ফাত্তাহ ও ফিদা হাসান বাদশা পুরোদমে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলার জন্য সতর্ক করেছেন প্রার্থীদের।