দেশজুড়ে স্কুলের দুর্নীতির খোঁজে মাঠে দুদক

 

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশের মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ভর্তিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়মের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরমধ্যে রাজধানীর নামকরা ১৫টি স্কুল রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের অর্থের বিনিময়ে উচ্চতর শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে কি না তার অনুসন্ধান করছে দুদক।

দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীকে রাজধানীর ১৫ স্কুলের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলো হলো মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, ধানমন্ডি গভ:বয়েজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, অজিমপুর গভ:গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, অগ্রণী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

অপরদিকে দেশের ৬৪ জেলার সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের ভর্তি বাণিজ্য, নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকে বোর্ডের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দান, বার্ষিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শ্রেণিতে পড়াশোনার সুযোগ প্রদানে আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে কি-না সে সম্পর্কে জানতে জেলা প্রশাসকদের কাছে প্রতিবেদন চেয়ে পাঠিয়েছে দুদক। এ জন্য গতকাল রোববার জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে রাজধানীর ১৫ নামকরা স্কুলের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রাথমিক অভিযোগ যাচাই বাছাই করেছে দুদক। গতকাল ওই স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষের কাছে ভর্তির বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে, তথাপি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণিতে শুন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা/ভর্তির পদ্ধতি ও আপনার বিভিন্ন শ্রেণিতে চলতি বছর ভর্তির জন্য আসন সংখ্যা এবং এ সংক্রান্ত তথ্যাদি অনুসন্ধানের স্বার্থে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।’ চিঠিতে আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে এ সব তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, আলোচ্য ১৫ স্কুলের বাইরে রাজধানীর অন্তত শতাধিক স্কুলের ভর্তি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ দুদক যাচাই বাছাই করেছে। এগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধান করা হবে। দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণিতে শুন্য আসনে ভর্তির ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কমিশনের হাতে রয়েছে। অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য কমিশন কর্তৃক একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।

অপরদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্র এবং দুদকের জেলা সমন্বিত আঞ্চলিক কার্যালয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুলে শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শ্রেণিতে উন্নীত করতে বড় অনিয়ম করা হয়ে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ প্রাথমিক যাছাই-বাছাই করে আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান করা হবে।

দুদক মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, দুনীতি দমন কমিশন এই মর্মে অবগত হয়েছে যে, দেশের কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের বোর্ডের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ প্রদান করে, আবার কোন কোন স্কুল বার্ষিক পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের উচ্চতর শ্রেণিতে উন্নীত করেছে। এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে থেকে বিভিন্ন ধরনের ফিস আরোপের মাধ্যমে দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে এবং স্কুলগুলোতে আর্থিক দুর্নীতি ঘটাচ্ছে।

জেলার স্কুলগুলোতে ৬ষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য কেউ উচ্চতর শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে কি-না এবং নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্যরা বোর্ডের পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের সুযোগ পাচ্ছে কি-না এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দুদকে পাঠাতে বলা হয়েছে।