সারাদেশে বিএনপির আজ বিক্ষোভ

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আজ বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মিছিল করবে বিএনপি। গতকাল শনিবার সকালে পুলিশবেষ্টিত নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে আবেদন করেছিলো বিএনপি। এতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিত থাকার কথা ছিলো। কিন্তু সমাবেশের অনুমতি না দেয়ায় আজকের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করা হল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনকে বিএনপি গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে।

পুলিশ সকাল থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে রাখে। কার্যালয়ের সামনে পুলিশ দুই সারিতে দাঁড়িয়ে অবস্থান নেয়। সাদা পোশাকেও বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেয় সেখানে। কার্যালয়ের ডানদিকে জলকামান, আমর্ড কার, প্রিজন ভ্যানসহ পুলিশের কয়েকটি গাড়ি রাখা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদসহ কয়েকজন অফিস কর্মী ছাড়া কাউকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সকাল সাড়ে ৯টায় কার্যালয়ে প্রবেশের সময় যুবদলের তিন কর্মী নিজাম উদ্দিন, ইউনুস ও শহীদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় পথচারীদের চলাচলেও বাধা দেয় পুলিশ। সাড়ে বারোটার দিকে কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ চলে যায়। এরপর রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা কার্যালয় ত্যাগ করেন।
কার্যালয় ঘিরে থাকা অবস্থায় সকাল সাড়ে দশটায় রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ কর্মসূচি করতে না দেয়ায় আবারও প্রমাণিত হল, তারা (সরকার) গণতন্ত্রের সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়েছে। নাগরিক স্বাধীনতার গলায় ফাঁসির দড়ি লটকিয়ে দিয়েছে। নিঃশব্দ বোবাকণ্ঠই হচ্ছে আওয়ামী বাকশালীদের কাছে প্রিয়। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকার কর্তৃক গতকালের (৭ জানুয়ারি) কর্মসূচিতে বর্বরোচিতভাবে বাধা দেয়ার তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। কর্মসূচি করতে না দেয়া এবং ৫ জানুয়ারি সারাদেশে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে আমরা সারা দেশে মহানগর ও জেলা সদরে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। রাজধানীর থানায় থানায় এ কর্মসূচি হবে।

রিজভী বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও একই যুদ্ধংদেহি পরিবেশ বিরাজমান। আজ ক্রসফায়ারে নিহত লাশ ও আটক বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বন্দিশালার ওপর, গুম-খুন হয়ে যাওয়া সন্তানদের মায়ের অশ্রুজলের ওপর বিরোধী দলের কর্মসূচিকে থেঁতলিয়ে দেয়ার জন্য জলকামান আর আর্মার্ড কারের ওপর আওয়ামী গণতন্ত্রের পতাকা ওড়ে। আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ী কণ্ঠে বলতে চাই, ক্ষমতাসীনরা উৎপীড়নের পথ বেছে নিয়ে যেভাবে গণতন্ত্রকে বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়েছেন, তার পরিণতিতে আপনাদের পরিস্থিতি যদি হয় ভয়াবহ, তাহলে আপনাদের জন্য কান্না ও হায়-হুতাশ করার লোকও খুঁজে পাবেন না।

বরিশালের গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচিতে হামলার কথা উল্লেখ করে রিজভী আহমেদ বলেন, পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে কাউন্সিলরসহ মহিলা দলের অর্ধশত নেতাকর্মীকে নির্যাতন করে মারাত্মক আহত করেছে। গুরুতর অবস্থায় তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও ক্যাডাররা নারী নির্যাতনের প্রতিযোগিতাকে অলিম্পিকের স্তরে উন্নীত করেছে। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যই অনাচারের পথ বেছে নিয়েছে সরকার। এ জন্যই অপরাধীরা আশকারা পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নিজেই যেন অপরাধীদের প্রজনন খামার।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া: আওয়ামী লীগ নেতার উদ্দেশে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসে আছে। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। এখন র‌্যাব-পুলিশ ও অদৃশ্য ক্ষমতার জোর আপনাদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে। আজ দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, সংবিধানবহির্ভূতভাবে ক্ষমতায় থাকা মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারকে সমর্থন করা কি ষড়যন্ত্রকারী নয়? বিএনপি কোনো অশুভ শক্তি বা গণতন্ত্র নস্যাৎ করা শক্তিকে কখনো সমর্থন দেয়নি। ষড়যন্ত্র যদি হয় দ্বিচারিতা, মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেয়া এবং ক্ষমতায় এসে তার বিপরীত কাজ করা, তাহলে এটারও উত্তর তাকে (ওবায়দুল কাদের) দিতে হবে।

 

Leave a comment