পাঠ্যবইয়ে ভুলের দায় কার?

বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পেরে সরকার প্রশংসা অর্জন করেছে সব মহলে। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ সরকারের অত্যন্ত মহতী একটি উদ্যোগ এবং বছরের প্রথম দিনটিতে এ কারণে রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে দেশের সর্বত্র। নতুন ক্লাসে নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন শুরু হওয়ার পরমান্দের মাত্রার ব্যাপকতাও দৃষ্টিগ্রাহ্য। বছরের শুরুটা তাই শিক্ষার্থীদের কাটে আনন্দ-উৎসবের মধ্যদিয়ে। কিন্তু পাঠ্যবইয়ে ভুলের সংবাদ আনন্দের মধ্যে ছেদ টেনে দিয়েছে। গতকাল দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, অসংখ্য ভুলে ভরা পাঠ্যবই। মলাট ঝকঝকে হলেও ভেতরে ছাপার মান অত্যন্ত নি¤œ। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’র বর্ণ পরিচয় অংশে ‘ওড়না’ বিতর্ক, পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’ এবং ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বইয়ে বানান ভুল, প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলায়’ ১১নং পৃষ্ঠায় ‘ছাগল আম খায়’ এর মতো হাস্যকর তথ্য রয়েছে। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির ‘আমার বাংলা বইয়ে পদ্য বিকৃত করাসহ রয়েছে নানা ধরনের ভুলভ্রান্তি। বিষয়গুলো নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সঙ্গতই ঝড় উঠেছে।
শুধু ভুলই নয়, পাঠ্যবইয়ে রয়েছে নানা রকম অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ও। অনেক শিক্ষাবিদের মতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের বিতর্কিত বিষয়গুলো ফিরে আসা খুব বিস্ময়কর। নিখাদ সাহিত্য ও ভাষা শিক্ষার বইয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে তুলে আনা হয়েছে একেবারে ধর্মীয় বিষয়। নতুন শিক্ষানীতির আলোকে তৈরি কারিকুলামের ভিত্তিতে নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের তিন বছরের মাথায় এবার আবার বড় ধরনের পরিবর্তনের অভিযোগও উঠেছে। পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন, সংযোজন-বিয়োজনের নিয়ম হচ্ছে বিদ্যালয় পর্যায়ে ট্রাই আউটের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামত সংগ্রহ ও এর ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে কর্মশালা এবং তার আলোকে এনসিসিসিতে (ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অডিনেশন কমিটি) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ। কিন্তু এবার পাঠ্যপুস্তকের সংযোজন-বিয়োজনের বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত হয়েছে এনসিসিসির সভায়। শিক্ষাজীবনের শুরুতেই যদি শিক্ষার্থীরা ভুল পাঠ নিয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করে তাহলে আমরা যাদের ভবিষ্যত কর্ণধার বলি তাদের কী হবে? পাঠ্যবইয়ে ভুলের ঘটনা যে এবারই প্রথম ঘটলো তা কিন্তু নয়। এর আগে এক বিষয়ের মধ্যে অন্য বিষয়ের পাতা ঢুকে যাওয়া, ফর্মার ওলট-পালটসহ বহুবিধ ত্রুটি-বিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। আর ছাপার মান নিয়ে তো বরাবরই কথা উঠে আসছে। দেখা যাচ্ছে, অতীতের ভুল থেকে আমাদের দায়িত্বশীলরা কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করেননি। বিষয়টি পরিতাপের যুগপৎ উদ্বেগজনক। এ রকম বিভ্রান্তি শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ ঘটানোর জন্য যথেষ্ট।
সরকারের বিশাল সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে কতিপয় দায়িত্বশীলের উদাসীনতা-অদূরদর্শিতা কিংবা এক্ষেত্রে কোনো রকম ষড়যন্ত্র রয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। কারো কারোর অবহেলা-অদক্ষতা-অদূরদর্শিতা কিংবা স্বেচ্ছাচারিতার খেসারত তো প্রজন্ম দিতে পারে না। বিষয়টিকে দ্রুত গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। পাঠ্যবই সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেছে এটা আনন্দের কিন্তু এসব পাঠ্যবই ভুলে ভরা এটি নিশ্চয়ই বিষাদময় উদ্বেগজনক বার্তা। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দূরদর্শিতায়। সরকারের অর্জনের খতিয়ানও এর ফলে বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু পাঠ্যবইয়ে ভুল ও অসঙ্গতির যেসব বিষয় সঙ্গতই আলোচনার মুখ্য কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ ব্যাপারে ত্বরিত ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।