গুলশান হামলার মারজান ও জাপানি হত্যার সাদ্দাম নিহত

 

স্টাফ রিপোর্টার: গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মূল পরিকল্পনাকারী নব্য জেএমবির অপারেশন কমান্ডার নূরুল ইসলাম ওরফে মারজান অবশেষে পুলিশের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। মারজানের সাথে তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাদ্দাম হোসেনও নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধে বধ্যভূমিতে প্রবেশমুখে এই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।

মারজান নিহত হওয়ার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনার আগে মারজান বনানীর একটি রেস্তোরাঁ ও কূটনৈতিক এলাকার একটি দূতাবাস রেকি করেছিলেন। তবে মারজান একদিন হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ রেকি করে নব্য জেএমবির অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তামিমকে জানান, ‘হামলার জন্য হলি আর্টিজানই সবচেয়ে ভালো স্থান। হলি আর্টিজানে হামলা করা হলে একসঙ্গে অনেক বিদেশিকে হত্যা করা যাবে।’ পরে মারজানের পরামর্শেই অন্য টার্গেট বদল করে হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনা করা হয়। গত বছরের পহেলা জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর ১২ আগস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে মারজানের ছবি প্রকাশ করা হয়। তার বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। প্রায় পাঁচ মাস পর বৃহস্পতিবার পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সহযোগী সাদ্দামসহ নিহত হন তিনি।

ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িত আরও অন্তত দুজন জঙ্গি, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ওরফে রাহুল এবং রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সুভাষের বিষয়েও তারা কিছু তথ্য পেয়েছেন। শিগগিরই তাদের ধরতে অভিযান চালানো হবে। এছাড়া সারাদেশে ব্লগার, লেখক ও অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আনসার আল ইসলামের অন্যতম নেতা মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হককেও তারা খুঁজছেন।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মারজান ছিলেন গুলশান হামলার অপারেশন কমান্ডার। তিনি টার্গেট নির্ধারণ করার পাশাপাশি নিজেই পাঁচ হামলাকারীকে নির্বাচন এবং তাদেরকে হলি আর্টিজানে হামলার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন।

সিটিটিসি সূত্র জানায়, মারজান বেশিরভাগ সময় নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীর সঙ্গে চলাফেরা করতেন। হলি আর্টিজানে হামলার সময় তারা দুজন মিরপুরের এক জঙ্গি আস্তানায় অবস্থান করছিলেন। সেখানে বসেই হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গি সদস্য রোহান ইমতিয়াজের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। বিশেষ একটি যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের যে কথাবার্তা হয়েছিল, তার কিছু অংশ ফরেনসিক পরীক্ষায় উদ্ধারও করেছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, মূলত ২০১৩ সালের শেষ দিকে উগ্রপন্থি জঙ্গি দলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন মারজান। তার আপন বোন জামাই নব্য জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ সাগরের মাধ্যমে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন তিনি। আগে তারা দুজনই পুরনো জেএমবির একটি অংশের হয়ে কাজ করতেন। ২০১৫ সালে তারা তামিমের নেতৃত্বে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে পড়াশোনা করলেও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ায় মারজান পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ফেলেন। ২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর পুরনো ঢাকার হোসনি দালানে হামলার কয়েকদিন পর মিরপুরের একটি আস্তানায় নব্য জেএমবির নেতারা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেই ছোটখাটো হামলার পাশাপাশি বড় হামলার সিদ্ধান্ত হয়। পরে তামিমের নেতৃত্বে মারজানসহ অন্যরা হামলার জায়গা নির্ধারণ করতে মাঠে নামেন।

গত ১০ সেপ্টেম্বরে আজিমপুরে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সাবেক সহ-সভাপতি তানভীর কাদরী নিহত হন। ঐ অভিযানে পুলিশ তিন নারী জঙ্গি ও তানভীর কাদরীর ছেলে তাহরীম কাদরীকে গ্রেফতার করে। গুলশান হামলায় মারজানের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে দেয়া এক জবানবন্দিতে তাহরীম কাদেরী বলেছেন, ‘আমরা বসুন্ধরার বাসায় ওঠার কয়েকদিন পর তামিম আঙ্কেল ও মারজান আঙ্কেল বাসায় আসে।…তামিম, চকলেট, মারজানরা বাসায় ব্যাগ নিয়ে আসে। ব্যাগে অস্ত্র ছিলো।’ তাহরীমের বর্ণনায় ওই বাসাতেই গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গিরা অবস্থান করছিলেন।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জানায়, শুরু থেকেই তামিম ও মারজান সবসময় একসঙ্গে অবস্থান করতেন। তামিম ঢাকা শহর খুব বেশি চিনতেন না। মারজানই তাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে সহযোগিতা করতেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি আরবি ভাষাতেও দক্ষ ছিলেন তিনি। ২৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে তামিম আহমেদ চৌধুরী তার দুই সহযোগীসহ নিহত হন। জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তামিম ও মারজান নিহত হলেও গুলশান হামলা মামলার অভিযোগপত্রে হামলার বর্ণনায় এই দুজনের নাম অবশ্যই উল্লেখ থাকবে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন।