স্টাফ রিপোর্টার: বছরের প্রথম দিনেই বই পেয়ে আনন্দে আটখানা হয়েছিলো ছাত্রছাত্রীরা। রংবেরঙের মলাট আর ছবি আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছিল শিশু শিক্ষার্থীদের। কিন্তু পাঠ্যবইয়ে নানা অপ্রাসঙ্গিক ছবি দেখে দ্বিধায় পড়েছে এই কোমলমতিরা। ভুলেভরা অনেক বইয়েও হতাশ হয়েছে তারা। পাঠ্যবইয়ের এসব হাস্যকর ভুলভ্রান্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়।
প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ের বর্ণ পরিচয় অংশে ‘ও’তে ‘ওড়না চাই’ লেখা হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুকে একজন লিখেছেন, ‘একজন শিশু শিক্ষার্থী ওড়নার কী বুঝবে? ওড়না নিয়ে শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করলে শিক্ষকই বা কী উত্তর দেবেন?’ ‘আমার বাংলা’ অংশে ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় ছাগলের ছবি আম গাছের ওপর জুড়ে দেয়া হয়েছে। এটি দেখে শিশু শিক্ষার্থীরা ছোটবেলায় শিখছে যে, ছাগল গাছে উঠেই আম খায়। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’-এ পদ্য ‘বিকৃত’ করাসহ রয়েছে নানা ধরনের ভুলভ্রান্তি। পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে ‘ঘোষণা’ বানান ‘ঘোষণা’, ‘সমুদ্র’ বানান ‘সমুদ’ লেখা হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির হিন্দুধর্ম শিক্ষা বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় ইংরেজি নীতিবাক্য লেখা হয়েছে ভুল বানানে। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’ পঙিক্তর বদলে লেখা হয়েছে ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে’। কবিতার চতুর্থ লাইনে ‘মানুষ হইতে হবে—এই তার পণ’-এর ‘হইতে’ শব্দটিকে পাল্টে লেখা হয়েছে ‘হতেই’। নবম লাইনে ‘সে ছেলে কে চায় বল কথায়-কথায়’-এর ‘চায়’ শব্দটির বদলে লেখা হয়েছে ‘চাই’। পঞ্চদশ লাইনে ‘মনে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান’-এর ‘খাট’ এর বদলে লেখা হয়েছে ‘খাটো’। এ ছাড়া কবিতাটির একাদশ থেকে চতুর্দশ লাইন বাদ দেয়া হয়েছে।
পাঠ্যবইয়ে নানা ভুলভ্রান্তি আর অপ্রাসঙ্গিক ছবি জুড়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণচন্দ্র সাহা বলেন, বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগের প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিভিন্ন শ্রেণির দ্রুতপঠন বইয়ে বিদেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অষ্টম শ্রেণির আনন্দপাঠ বইটির সূচিপত্রে দেয়া সাতটি গল্পের সবই বিদেশি লেখকদের গল্প, উপন্যাস অবলম্বনে লেখা। এর মধ্যে রয়েছে আরব্য উপন্যাস অবলম্বনে ‘কিশোর কাজী’, মার্ক টোয়েনের ‘রাজকুমার ও ভিখারির ছেলে’, ড্যানিয়েল ডিফোর ‘রবিনসন ক্রুশো’, পারস্যের ঔপন্যাসিক মহাকবি আবুল কাশেম ফেরদৌসীর ‘সোহরাব রোস্তম’, উইলিয়াম শেকসিপয়রের ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’, ওয়াশিংটন আরভিং রচিত গল্প অবলম্বনে ‘রিপ ভ্যান উইংকল’ এবং লেভ তলস্তয়ের ‘সাড়ে তিন হাত জমি’।
শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশি লেখকদের গল্প কাহিনী থেকে পাঠ নেয়ার অনেক কিছুই আছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আমাদের দেশের লেখকদের বাদ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণির ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ে ছোট-বড় মিলে মোট ২৪টি ভুল রয়েছে। আরবিতে কালেমা তাইয়্যিবা, কালেমা শাহাদাত লিখতেও ভুল করা হয়েছে। ব্যাকরণগত ছাড়াও রয়েছে নানা ভুল।