সরগরম হয়ে উঠেছে কেরুজ আঙিনা

কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন জানুয়ারির শেষের দিকে

 

নির্বাচনের মাঠ ঝালিয়ে নিচ্ছেন প্রার্থীরা

দর্শনা অফিস: কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন বরাবরই আলোড়ন সৃষ্টি করে থাকে। এ নির্বাচনের বাতাস শুধু দর্শনা শহরেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এ বাতাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলায়। প্রার্থীদের দৌড়-ঝাঁপ, প্রচার-প্রচারণা নির্বাচনের আমেজ বাড়িয়ে তোলে। এখনও পর্যন্ত সাধারণসভার দিনক্ষণ ঠিক না হলেও প্রার্থীদের দলবদ্ধ মহড়াই শহরবাসীকে মনে করিয়ে দিচ্ছে কেরুজ নির্বাচনের কথা। কেরুজ এলাকায় হিড়িক পড়ে গেছে কর্মীসভার। প্রতিদিন কোনো কোনো সংগঠনের কর্মীসভা ও মধ্যাহ্নভোজ চলছে। প্রত্যেক সংগঠনের র‌্যালি ও কর্মীসভায় উপস্থিতির সংখ্যা দেখে বোঝাই মুশকিল ভোটারের সংখ্যা কতো। এবারের নির্বাচনেও কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ভোটারের তুলনায় বহিরাগতদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্যণীয়।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২০ জানয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচন। সে হিসেব অনুযায়ি আগামি বছরের জানুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। জানুয়ারি শুরুতে সাধারণসভার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে ইউনিয়ন সুত্রে জানা গেছে। সাধারণসভা থেকেই নির্বাচনের দিন ঘোষনা করা হবে। আজ কালের মধ্যে কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠক থেকে নির্ধারণ করা হবে সাধারণসভার দিন। এদিকে কেরুজ চিনিকলের ২০১৪-১৫ আখ মাড়াই মরসুমের যাত্রা শুরু হয়েছে চলতি মাসেই। মিলের যাত্রা শুরুর আগেই নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রার্থীদের যাত্রা শুরু হয়েছে বেশ আগেভাগেই। বরাবরের মতো এবারো সাধারণসভায় এক পক্ষ ওপর পক্ষকে কথার তীরে ঘায়েল করার প্রস্তুতি নিয়েছে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। কেরুজ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে ব্যপক প্রচার-প্রচারণা। ভোটে জিততে এখন থেকেই মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা। শীতকে উপেক্ষা করে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দেয়া শুরু করেছেন প্রার্থীরা। দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতির ঝুলি। নির্বাচিত হলে সকলের দাবিই পূরণের আশ্বাসের কথা নতুন কিছু নয়। পুরাতন হলেও সকলকেই তালিকার ১ নম্বরে রাখছেন প্রার্থীরা। প্রশ্ন উঠেছে সকলেই তালিকার ১ নম্বরে থাকলে তালিকার পরের নম্বরগুলোতে কারা? আসলে কেরুজ নির্বাচন মানেই চাওয়া-পাওয়া আর পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ। এ ক্ষোভকে পুঁজি করেই সাধারণ ভোটারদের মধ্যে দল বদলের পালার ঘটনাতো অনেক পুরোনো। এ পালায় পাল্লা দিয়ে সুবিধা লুটছে কোনো কোনো সুবিধালোভী ভোটার। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়ন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার গরম বাতাশ শুধু কেরুজ আঙিনায় সীমাবদ্ধ নেই। এ বাতাস জেলার সর্বত্র বইছে। মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশ, মোটরসাইকেল শোডাউনে সরগরম অবস্থায় পরিণত হয়েছে কেরুজ আঙিনা। এছাড়া ইংরেজি নববর্ষের চমকপ্রদ ছবি সংবলিত ক্যালেন্ডার, পোস্টার ও ব্যানার ছাপানো প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন প্রার্থীরা। মিলের যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে এ প্রচারণা আরো তুঙ্গে উঠেছে। গত নির্বাচনে কেরুজ চিনিকলের হিসাব, প্রশাসন ভান্ডার, স্বাস্থ্যবিধান, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাই মদ কারখানা, ডিস্টিলারি, বিদ্যুত ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগসহ বাণিজ্যিক খামারগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ১ হাজার ২০৮ জন। তবে এবার ভোটারের সংখ্যা ৫০-৬০ জন কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেরুজ নির্বাচনে বরাবরই শতভাগ ভোট পোল হয়ে থাকে। ইউনিয়নের ২৫টি পদের স্থলে এবার নির্বাচন হবে ১৩টি পদে। শ্রমআইনে এ পরিবর্তন করা হয়েছে। কোনো প্রার্থী পরাজিত হলেও আগামীতে নির্বাচিত হওয়ার আশায় টানা দু বছর সুবিধালোভী ভোটারের চাহিদা পূরণ করে থাকেন। আগামী নির্বাচনে ৪ জন সভাপতি, ৩ জন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছাড়াও বিভিন্ন পদের বিপরীতে রয়েছেন অসংখ্য প্রার্থী। সাবেক সভাপতি আজিজুল হকের শূন্যতা পূরণে তার ছেলে সবুজ মাঠে নেমেছেন গত নির্বাচন থেকেই। তিনি বাবার স্থান দখলে শুরু করেছেন নির্বাচনী প্রচারণা। এছাড়া সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে বরাবরের মতো যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- তৈয়ব আলী সংগঠনের কর্ণধর বর্তমান সভাপতি তৈয়ব আলী, সূর্যসেনা শ্রমজীবী সংগঠনের চেয়ারম্যান ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাফিজুল ইসলাম হাফিজ, মোস্তাফিজুর সংগঠনের কর্ণধর সাবেক সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সবুজ সংগঠনের কর্ণধর ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা হলেন- মাসুদ সংগঠনের কর্ণধর ইউনিয়নের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ, প্রিন্স সংগঠনের কর্ণধর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, ও সদ্য আত্মপ্রকাশ করা ইসমাইল সংগঠনের কর্ণধর ইসমাইল হোসেন। এছাড়া গত নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে আ. রব বাবু ও আতাউর রহমানের নাম শোনা গেলেও এবার তাদের নাম শোনা যাচ্ছে না।