অসুস্থ প্রসূতি বহনের বাহনে সওয়ার যখন সুস্থ নব দম্পতি

 

কতটুকু অসুস্থ হলে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে এ্যাম্বুলেন্সযোগে রোগীকে হাসপাতালের বদলে বাড়ি নিতে হয়? পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের চুয়াডাঙ্গা উপ পরিচালক রেজউল করিমের ছেলে ও ছেলের নববধূসহ কিছু নিকটজনকে এ্যাম্বুলেন্সযোগে বাড়ি নেয়ার দৃশ্য দেখে প্রশ্নটি দানা বাধা অবশ্যই অসঙ্গত নয়। সিনেমাহলপাড়া থেকে ফার্মপাড়া। দূরত্ব যতোটুকুই হোক, অতোটুকুর জন্য হলেও সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে বর-বধূ বহন করার মধ্যে বড় কর্তার শুধু কর্তৃত্বই প্রকাশ পায় না, রুচিবোধও বোদ্ধাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যদিও অনুষ্ঠানস্থলে একজনের অসুস্থতার করণে এ্যাম্বুলেন্স নেয়া হয় বলে যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন তিনি। যুক্তিটা কতটা খোঁড়া, কতটা সবল তা নিশ্চয় বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে উপলব্ধি প্রয়োজন। তা না হলে সুরুচি-কুরুচির পার্থক্যটাই তো গুলিয়ে যাবে।

যে এ্যাম্বুলেন্সটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের রোগী বহনের জন্য বরাদ্দকৃত, সেটা অন্য রোগী বহন করতে পারবে না তা তো নয়। তাই বলে বিয়ের সওয়ার এম্বুলেন্সে? এক দুজনকে নয়, অনেক আত্মীয় স্বজনকেই আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে পাত পেড়ে খাওয়ানো হয়েছে। সেখানে একজন অসুস্থ হলেন। তাকে হাসপাতালের বদলে বাড়ি নিতে তলব হলো এ্যাম্বুলেন্স। এতে কারোরই বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়, অসুস্থতা সেখানে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য পথ বর-বধূকে বহনের জন্য যদি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের এ্যাম্বুলেন্স নিতে হয় তা হলে অনুষ্ঠানের অন্য খরচটাও কি ওই অধিকারীক তার বিভাগীয় অধিনস্থ দফতরসমূহে দায়িত্বশীলদের ঘাড়ে চাপিয়েছেন? নিশ্চয় অতোটা নয়, যতোটা এখন সমালোচকদের মুখোরোচক আলোচনার খোরাক হয়েছে। যদিও এমনটি হতে পারে তা আগেই ভেবে দেখা দরকার ছিলো। কেনো না, তিনি তো আর অসচেতন নন। তা ছাড়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কর্তা ফোন পেয়েই এ্যাম্বুলেন্সটি কেনো পাঠিয়ে দিলেন? তবে কি এ্যাম্বুলেন্সটি আরো অনেক কিছুই বহনে ওইভাবেই ব্যবহৃত হয়? বর-কনেও তো আর নাবালক-নাবালিকা নন, বিয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে তাদেরও তো ওই অসুস্থ প্রসূতি বহনের বাহনে সওয়ার হওয়াতে আপত্তি করা উচিৎ ছিলো।

অসচেতনতার অন্ধকারাচ্ছন্নতা থেকে মুক্ত হতে না পারা কেউ ভুল করলে সেটা সুধরে নেয়ার দায়িত্ব সমাজের সচেতনদের ওপরই বর্তায়। আর সচেতনই যদি সেই ভুল করে তা হলে তাকে সুধরে দেবে কে? সংবাদপত্রের পাতায় উঠে আসা প্রশ্নটি নিশ্চয় শিক্ষিত সচেতন পদস্থর পূর্ণতা পেতে সহায়ক হবে। সরকারি দফতরের দায়িত্ব পালনকারীকে একটু বেশি বেশি করেই সরকারি বিধি বিধান মেনে চলা যেমন বিধেয়, তেমনই কোনটি সমালোচনার খোরাক হতে পারে তা আগেভাগেই ভেবে নিয়ে মানসিকতার পরিবর্তমন প্রয়োজন। নতুন বর-বধূকে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে বাড়ি নেয়ার দৃশ্য নতুন আত্মীয় স্বজন কেমন দৃষ্টিতে দেখেছেন? নববধূকে বোধহয় অগত্যায় উঠতে হয়েছে। যে বা যারাই ওদের প্রসূতিবহনের গাড়িতে তুলেছেন তাদের যা হয় হোক, নব দম্পতি সুখি হোক।