ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করা হয় দেশের সকল জেলার মতই প্রতিটি উপলক্ষকে কেন্দ্র করে। শীতের শুরুর সাথে সাথে বাড়তে থাকে মেলার আসর। কিন্তু পরিচ্ছন্ন বিনোদনের সেই মেলাকে কলুশিত করতে শুরু করে যাত্রার নামে অশ্লিলতা ও বিভিন্ন ধরনের জুয়ার আসর।
এসবের সাথে আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ হয় ‘র্যাফেল ড্র’র নামের লটারি প্রতিযোগিতার কল্যাণে। নিম্নবিত্তদের কাছে ১০/২০ টাকা মূল্যের লটারিতে লক্ষ টাকার পুরস্কারের জনপ্রিয়তাকে নিয়ে যায় ব্যাপক পরিসরে। কিন্তু এখানেও দেখা দিতে থাকে বিভিন্ন সমস্য।
ঝিনাইদহের প্রেক্ষাপটে গত বছর থেকে সর্বোচ্চো মাত্রায় জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে ‘র্যাফেল ড্র’র নামে এই লটারি প্রতিযোগিতা। আর তখন থেকেই ঘটতে থাকে নানান অপ্রিতিকর ঘটনা। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র পরিসরে লটারি বিক্রির টাকা ছিনতাই ও টিকেট নষ্ট করে ফেলা থেকে শুরু হয়। কখনোবা পুরস্কার না দিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে লটারির আয়োজকরা। গত বছরের শেষ থেকে চলতি বছরের শুরুর ভেতর শহরের শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে আয়োজন করা হয় কসমেটিক্স মেলার। সেখানেও ব্যাবস্থা করা হয় “র্যাফেল ড্র” তথা লটারির। জেলার ৬ উপজেলার তৃনমূল পর্যায়ে রিকশা, ইজিবাইক ও ট্যাম্পুর মাধ্যমে তাদের টিকিট বিক্রি শুরু হয়, ওসই সাথে শুরু হয় বিভিন্ন বিতর্কতা ও বিশৃংখলার।
সর্বশেষ পর্যায়ে আইন-শৃংখলা রক্ষার সার্থে কঠর প্রশাসনিক পদক্ষেপে “র্যাফেল ড্র” বন্ধ করা হলে সেদিনের বিক্রিত টিকিটের ড্রসহ ২ দিনের পুরস্কার না দিয়ে হুট করে জেলার অজ¯্র সাধারণ মানুষের ২০ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় এর আয়োজকরা।
খবর জেলায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন স্থানে টিকিট বিক্রেতাদের ওপর চড়াও হয়ে উত্তম-মাধ্যম দেয় তাদের। কোথাও আবার তাদের কাছ থেকে বিক্রিত টিকিটের টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটে। পরবর্তীতে আবারো প্রশাসনের চেষ্টায় পরিস্থিতি ঠা-া হলেও সেবার “র্যাফেল ড্র”র নামে আর কোন লটারির আয়োজন হয়নি।
কিন্তু চলতি শীত মরসুমের শুরু থেকে আয়োজিত বিভিন্ন মেলায় আবারও আনা হয় “র্যাফেল ড্র” তথা সেই সকল লটারি। আর এবারের পর্বের শুরুতেই ঘটতে শুরু করে অপ্রীতিকর ঘটনা।
অভিযোগে বলা হয়, গত ১০ ডিসেম্বর শৈলকুপার ভাটই এলাকায় মেলা আয়োজকদের যোগসাজসে ‘উল্লাস রাফেল ড্র’ নামের লটারী প্রতারক চক্র জনগণের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১০ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধায় লটারী ড্র’র সময় কাউকে পাওয়া যায়নি। ‘উল্লাস রাফেল ড্র’ সেদিন লটারি ড্র না করে তারা সবাই মেলা থেকে পালিয়ে যায়। মেলার আয়োজনকারী সাথী সমাজ কল্যাণ সংস্থার ভূমিকা রহস্যজনক ছিলো বলে অভিযোগও করেন লটারী ক্রেতারা। শ শ মানুষ প্রতারণার শিকার হয় এ মেলায় লটারী কিনে।
জানা যায়, সেদিন সন্ধ্যায় মেলামাঠে এপ্যাসি মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন মূল্যবান পুরস্কার দেয়ার কথা ছিলো লটারীতে। এদিকে মেলা কমিটির প্রধান টিএ রাজু তাদের যোগসাজসের কথা অস্বীকার করে তখন জানান, যারা লটারী কিনেছে তাদের খেলা পরবর্তী দিন যে কোনভাবে করানো হবে এবং পূর্বের নিয়ম অনুসারে পুরস্কারও দেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
তবে এ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় অবধি সেসকল লটারির ড্র সম্পন্ন করা হয়নি বলে জানা যায়। এলাকাবাসীর বিশ্বাস, তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামলাতেই টিএ রাজু এ আশ্বাস দিলেও তিনি তা পূর্ণ করবেন না। এর আগে শৈলকুপার রতিডাঙ্গা গ্রামে লটারী আয়োজকরা ২ দিনের পুরস্কার না দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে চম্পট দেয়। র্যাফেল ড্র’র নামে বিভিন্ন লটারী প্রতারকচক্র এভাবেই দিনের পরদিন দিন মানুষ ঠকিয়ে চলেছে নীরবে। সমাজের গরিব মানুষের ঘামে ভেজা টাকাগুলো সুক্ষবুদ্ধি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু প্রতারক চক্র।
শেষে জোরে সোরে ঝিনাইদহ সদরের সিটি কলেজ প্রাঙ্গণে শিল্প ও বানিজ্য মেলায় চলছে দৈনিক বেনারশী র্যাফেল ড্র। ঝিনাইদহবাসী অতিষ্ঠ হয়ে অপেক্ষা করছে কবে হবে এর অবসান আর কতো লাখ টাকা হাতিয়ে চম্পট দেয় এই দৈনিক বেনারশী র্যাফেল ড্র।