চোরাচালান রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকেই

 

দেশে সোনার চোরাচালান এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। কিছুতেই এই চোরাচালান রোধ করা যাচ্ছে না। যাদের এই চোরাচালান রোধ করার দায়িত্ব তারাও অবলীলায় জড়িয়ে পড়ছে এ চক্রের সাথে। এর আগে চোরাচালানের সাথে জড়িত এমন চক্রের সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। অবাক ব্যাপার যে, শুল্ক, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও জাতীয় গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (এনএসআই) একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে জড়িত।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমান থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রায় সাড়ে ১১ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। কে বা কারা এ সোনা ফেলে গেছে, তা জানা যায়নি। গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই সোনা উদ্ধার করেন শুল্ক কর্মকর্তারা। বিমানটি সকালে দোহা থেকে ঢাকায় আসে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিমানটিতে তল্লাশি চালানো হয়। একটি আসনের নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি প্যাকেটে এ সোনা মেলে।

উল্লেখ, বিগত এক বছরে ২ হাজার ২৭ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। আর বিস্ময়কর ব্যাপার যে দেশে এক ভরি সোনাও আমদানি হয়নি বিগত ৫ বছরে। এই ঘটনায় এটাই প্রমাণিত হয় যে চোরাচালানকৃত সোনাই দেশীয় চাহিদা মেটাচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশ যে সোনা চোরাচালানের নিরাপদ রুট এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এখান থেকে ভারতে সোনা পাচার করা হয়, আর সোনা আনা হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে। এই ধরনের সোনার চালান যে প্রায় প্রতিদিনই মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে আসছে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। যখন ধরা পড়ে তখন চারদিকে হইচই পড়ে যায় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়ে ওঠে। কেবল বিমানের টয়লেটেই নয়, যাত্রীর জুতোয় মানিব্যাগে লাগেজে, হ্যাঙ্গার গেটে, বের্ডি ব্রিজ সর্বত্রই পাওয়া যাচ্ছে সোনার বার। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে সোনার বার। টহল পুলিশের তল্লাশিতে দামি গাড়িতেও পাওয়া যাচ্ছে সোনার বার। দেশের সীমান্ত এলাকায়ও ধরা পড়ছে সোনার চোরাচালান। এ সব ঘটনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে। এর সাথে আন্তর্জাতিক চোরাচালানি চক্রও কাজ করছে। যা বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক।

সোনা মূল্যবান জিনিস হওয়ায় একশ্রেণির মানুষের সোনার প্রতি ঝোঁক ও লোভ দুটোই অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। যারা এই চোরাচালানের সাথে জড়িত তারা রাতারাতি ধনী হতে চায়। কিন্তু তারা আজ দেশ ও জাতির শত্রু। এর ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যাদের ওপর চোরাচালান রোধের দায়িত্ব তারা যদি এর সাথে জড়িয়ে পড়ে তাহলে কীভাবে এটা রোধ করা সম্ভব। এর আগে ১৪৯টি সোনার বারসহ রাজধানীর রামপুরা থানার এক এসআইসহ তিন পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে পুলিশের সোর্সকেও। এমন ঘটনা যে প্রায়ই ঘটছে না এর প্রমাণ কী? আমরা মনে করি এ পরিস্থিতি দেশের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। এ অবস্থার দ্রুত অবসান হওয়া জরুরি। আমরা চাই, দেশ থেকে চোরাচালান একেবারেই বন্ধ হোক। সে জন্য সক্রিয় হতে হবে সরকারকেই এবং এর কোনো বিকল্প নেই।