আজ প্রথমবারের মতো সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে জেলা পরিষদের প্রশাসক যুগের অবসান ঘটছে। ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২২ জেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় তিন পার্বত্য জেলা বাদে বাকি ৩৯ জেলায় নির্বাচন হচ্ছে আজ। এসব জেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ১২৪ জন প্রার্থী। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী আমেজ কাটতে না কাটতেই জেলা পরিষদের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে নানাভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে আজকের নির্বাচনকে। ব্রিটিশ আমল থেকেই জেলা পরিষদ চালু ছিলো। ১৯৭৫ পরবর্তী সরকার সেটি পুনরায় চালু করলেও ১৯৯১ সালে গঠিত তৎকালীন সরকারের আমলে জেলা পরিষদ অকার্যকর হয়ে পড়ে। মূলত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর কোনো নির্বাচন না দেয়ায় জেলা পরিষদ অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়ে এ পরিষদ পরিচালনা শুরু হয়।
পার্বত্য তিনটি জেলা বাদে বাকি ৬১ জেলা পরিষদে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করার কথা থাকলেও সাড়ে চার বছরে তা সম্ভব হয়নি। নির্বাচন না হওয়ায় অনির্বাচিত ব্যক্তিরাই প্রশাসক হিসেবে জেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করায় জবাবদিহিতার বিষয়টি অনেকটাই গৌণ হয়ে যায়। মূলত এ বিষয়গুলো বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সরকার বিভাগকে দ্রুত জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ জনগণের মতের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধার প্রতিফলন।দীর্ঘ বিরতির পর জেলা পরিষদ নির্বাচন সব মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলেও বাতাসে নানারকম গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জেলায় জেলায় টাকা উড়ছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। সরকারের নানা স্তরের জনপ্রতিনিধিরাই এখানকার ভোটার। তা সত্ত্বেও সমর্থন পেতে টাকা ছড়ানো বা গ্রহণ করার সংবাদ সবার জন্যই অস্বস্তিকর বটে। এ ধরনের অভিযোগের সত্যাসত্য খণ্ডন করার দায় সংশ্লিষ্টদের। তবে কোনো নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এ ধরনের কর্মকাণ্ড কাঙ্খিত নয়। কারণ এতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সুযোগ থাকে এবং সরকারের ভাবমূর্তিও বিনষ্ট হয়। জেলা পরিষদ নির্বাচনে সরকারি দলের অংশগ্রহণের হার তুলনামূলকভাবে বেশি এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিতরাও সরকারি দলের। এছাড়াও প্রায় ৩০টি জেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছে। এরা জনগণের সমর্থন আদায়ে কতটা সক্ষম হবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে দল বা সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করাটা কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।
যে কোনো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা গুজব বাতাসে উড়বে এবং এটি নির্বাচনেরই একটি অংশ। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর এবং সর্বজন গ্রহণযোগ্য হোক এটি সবারই কাম্য। সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রমাণ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে স্বচ্ছ নির্বাচন সম্পন্ন করা কোনো কঠিন বিষয় নয়। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও সংশ্লিষ্টরা একই রকম স্বচ্ছতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হবেন।জয় হোক গণতন্ত্রের।