দীর্ঘ প্রেমের ইতিহাসের শেষ প্রান্তে গিয়ে দুজনে বিয়ে করলেও সংসার পাতার স্বপ্ন ভাঙতে বসেছে হিরামতির

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রেম মানে না কোনো বাধা, কোনো বারণ। প্রেমে বিভোর প্রেমিক-প্রেমিকার অনেকেই রচনা করেন ইতিহাস। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে তেমনই এক প্রেমের ইতিহাস রচনা করেছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য গোলাম রসুল (৫৮) ও তার প্রতিবেশী হিরামতি (৩৭)। প্রেমসম্পর্কের পুরো সময়টাতে ছিলো রোমান্টিকতা ও বিরহ ব্যথা। দীর্ঘ প্রেমের ইতিহাসের শেষ প্রান্তে গিয়ে দুজনে বিয়ে করলেও সংসার পাতার স্বপ্ন ভাঙতে বসেছে হিরামতির। স্বামী সংসার ছেড়ে গোলাম রসুলের ডাকে সাড়া দিয়ে সর্বস্ব হারাতে বসেছেন তিনি। এমনই বর্ণনা করে প্রেমিকা হিরামতি জানান, পাগলের মত গোলামকে তিনি ভালবাসলেও পদে পদে সে প্রতারণা করেছে।

হিরামতি জানান, প্রতিবেশী মৃত নবী সর্দ্দারের ছেলে গোলাম রসুল ছিলেন তার প্রাইভেট শিক্ষক। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়ার সময় তাদের প্রথম ভালো লাগা। এক পর্যায়ে সেই ভালো লাগা গড়ায় ভালোবাসার সম্পর্কে। কিশোর-কিশোরীর সেই প্রেম পৌঁছে গভীর থেকে গভীরে। দুজন ছাড়া দুজন যেন কিছুই কল্পনা করতে পারতে না। প্রেমের গভীর জলে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন তারা। চুটিয়ে প্রেম করার এক পর্যায়ে ছেদ পড়ে। সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগদান করেন গোলাম রসুল।

চাকরি পেয়ে গোলাম রসুল অন্যত্র বিয়ে করেন উল্লেখ করে হিরামতি বলেন, নিরুপায় হয়েও তিনি পরিবারের চাপেই যশোরের এক যুবকের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু মন কি আর মানে? জানটা পড়ে ছিলো গোলাম রসুলের কাছে। বিয়ের পরও গোলাম রসুল নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন প্রথম জীবনের প্রেম হিরামতির সাথে। তাই প্রথম স্ত্রীকে বাদ দিয়ে হিরামতিকেই বিয়ে করার প্রস্তাব দেন গোলাম রসুল। হিরামতি তার প্রস্তাবে সাড়াও দেন। স্বামীকে তালাক দিয়ে ফিরে আসেন পিতার বাড়িতে। কিন্তু গোলাম রসুল তার প্রতিশ্রুতি রাখেননি। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে শারীরিক সম্পর্কও ছিলো তাদের।

গোলাম রসুল বিয়ে না করায় বিপাকে পড়েন হিরামতি। দু কূল হারানোর আশংকায় দিশেহারা হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে প্রেমিক গোলাম রসুলের প্রস্তাবে তিনি ওমানে পাড়ি জমান। সেখানে দুই বছরের বেশি সময় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কষ্টে উর্পাজিত টাকার মধ্য থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা তিনি গোলাম রসুলের নামীয় ব্যাংক হিসেবে প্রেরণ করেন। ওই টাকা নিয়েও গোলাম রসুল প্রতারণা করেছে অভিযোগ করে হিরামতি আরো জানান, প্রেমিক গোলাম চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করার পরে তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এর মধ্যে তার দাম্পত্য জীবনে সন্তান আসে। স্ত্রী-সন্তানদের ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত দেন তিনি। হিরামতির ওমান থেকে দেশে ফিরলে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ফেরত দেয় গোলাম রসুল। বাকি টাকা আত্মাসাত করতেই আবারও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়।

গত ১৮ নভেম্বর রাজবাড়ির নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। নিকাহনামা ও নোটারি পাবলিকের বিয়ে এফিডেভিটের কাগজপত্র দেখিয়ে হিরামতি বলেন, বিয়ের পর দুজনে একসাথে বসবাসের কথা ছিলো। কিন্তু গোলাম রসুল প্রেমসম্পর্ক ও বিয়ের বিষয়টি এখন বেমালুম অস্বীকার করছে। অথচ প্রেমসম্পর্কের বিষয়টি উভয় পরিবার, গ্রামবাসী এমনকি এলাকার অনেকেই জানেন। গোলাম রসুলের প্রতারণায় হতবিহ্বল হিরামতি। এখন তিনি দিশেহারা। সরল বিশ্বাসে সব ছেড়ে যাকে নিয়েই তিনি বাঁচতে চেয়েছিলেন সেই প্রেমিকের বিশ্বাস ঘাতকতার প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন তিনি।