অর্থলিপ্সু কিছু শিক্ষকের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কতোটা অসহায় তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালরে নবম শ্রেণির ছাত্রীরা। সহপাঠীর অপমৃত্যু তাদের মুখ খুলতে বাধ্য করে। তারই প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত দল গঠন করা হয়। তদন্তে ওই অভিযোগেরই শুধু সত্যতা মেলেনি, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ পরীক্ষা গ্রহণের সময়ও কয়েক শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার নজির মিলেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত বর্ণনাসহ কয়েক দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ৪ জন শিক্ষকের বদলিসহ বিভাগীয় মামলার সুপারিশ। তদন্ত কমিটিকে অভিবাদন।
শিক্ষাদানে আগ্রহীকে শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ে নিযুক্ত করার পাশাপাশি দক্ষতাবৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা প্রশিক্ষণই শুধু দেয়া হয় না, সুন্দরভাবে জীবনযাপনের মতো অর্থও দেয়া হয়। বিশেষ করে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক মাস গেলে যা পান তা অন্য কারো তুলনায় কম নয়। তারপরও বাড়তি চর্চার নামে উপরি আয়ের ফাঁদপাতেন যারা তাদেরকে ঠিক কি বিশেষণে ভূষিত করা যায় তা সত্যিই ভাববার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ানো নিষেধ হলেও কে শোনে কার কথা? পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়েই বাড়তি পড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন করে মন্ত্রণালয় বিষয়ভিত্তিক ফি এবং কতোটা বিষয় পড়ানো যাবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই নীতিমালার সুযোগেও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসল ক্লাসকেই বাড়তি ক্লাস বরে মাসওয়ারি ফি আদায় করা হচ্ছে দিব্যি। তারও খেসারত দিতে হয়েছে চুয়াডাঙ্গার এক অভিভাবককে। কয়েক বছর আগে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর নিকট থেকে কোচিং ফি না পাওয়ার কারণে শিক্ষকের কটূক্তিতে আত্মঘাতী হয় দুস্থ পরিবারের উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী এক ছাত্র। সেই ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া পারভীন রিমুর আত্মঘাতী অভিভাবক মহলকে বড় অসহায় করে তোলে। কেননা, বিদ্যালয়ের শিক্ষক যখন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করার নানা কটূকৌশল অবলম্বন করেন, মানসিক চাপের মধ্যে ফেলেন, তখন অভিভাবকদের তা নীরবে মেনে নেয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না। প্রতিবাদ করলে না জানি সন্তানের শিক্ষা গ্রহণের পথে ওই শিক্ষক আরও বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। না, অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে অন্যায় বাড়ে না, বরঞ্চ দুর্বলচিত্তের ন্যায় প্রত্যাশীরাও প্রতিবাদকারীর পাশে দাঁড়ায়। চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির গণিত পরীক্ষার প্রশ্ন জটিল, নবম শ্রেণির ছাত্রী রিমুর পরীক্ষা চলাকালে তার খাতা কেড়ে নেয়া, দাঁড় করে রাখর মধ্যে কটূকৌশলের ছাঁয়া ছিলো। প্রত্যাশিত পরীক্ষা দিতে না পারার কারণেই রিমু আত্মঘাতী হয়েছে। যদিও আত্মঘাতী কোনো সমাধান নয়। তবুুও মেধাবী রিমুর আত্মঘাতী তার সহপাঠীদের প্রতিবাদী করে তোলে। সেই প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি যে তথ্য উপাত্ত্য ও প্রমাণ পেয়েছে, তার ভিত্তিতে যে সুপারিশ করেছে তা ধামাচাপা দেয়া হলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অসহায়ত্ব বাড়বে। বাড়বে শিক্ষক নামধারীদের অর্থলিপ্সুতা।
বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে যদি সকল শিক্ষার্থীকে শিক্ষা গ্রহণে মনোনীবেশ করে শিক্ষা গ্রহণের মতো পরিবেশ গড়ে শিক্ষাদান করা করেন শিক্ষক, তাহলে কি কোনো শিক্ষার্থীকে পিছিয়ে পড়তে হয়? শিক্ষক যখন বিদ্যালয়েই বাড়তি আয়ের সুযোগ পান তখন সেই সুযোগ যেমন নিতেই পারেন, ’তেমনই বাড়ি এসে পড়ো, ভালো নম্বর দেবো’ বলা শিক্ষকও উপরি আয়ের আশায় বাড়িতে শ্রম দিয়ে শ্রেণিকক্ষটাকে বিশ্রামাগার বানিয়ে বসেন। দেশে শিক্ষার যখন এই হাল, তখন জাতির মেরুদ- কতোটা ঘুনে ধরা নাকি শক্ত হচ্ছে তা বুঝতে কি আর বাকি থাকে? চিত্রটা পাল্টাতে দোষী শিক্ষকের শাস্তি অনিবার্য।