শিশু সোহানা প্রযুক্তির বলি নাকি অসতর্কতার খেসারত? না, অত্যাধুনিক বিজ্ঞানযুগে কোনো ঘটনাকেই নিছক দুর্ঘটনা বলে দায় এড়ানো যায় না। কোথাও না কোথাও ত্রুটি ছিলো বলেই গলার ওড়না ব্যাটারিচালিত অটোবাইকের চেন-মোটরের সাথে জড়িয়ে মুহূর্তের মধ্যেই দ্বিখ-িত হয় সে। চোখের সামনে সন্তানের এরকম মৃত্যু জগতের আর কোনো পিতা-মাতাকে যেন দেখতে না হয়। কায়মনে এ কামনা করে বসে থাকলে বা দুর্ঘটনাকে নেহাত নিয়তি বলে দায় এড়ালে সড়কের রক্তপিপাসু দানবরূপী যন্ত্রযানগুলো আরও ভয়ানক হয়ে উঠবে।
পুরোনো ধারণা আখড়ে পড়ে থাকলে যেমন নতুনের সন্ধান মেলে না, তেমনই সময়ের ¯্রােতে প্রযুক্তির সুবাতাস থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখলেও জগতের অগ্রযাত্রা থেমে থাকে না। জীবনের জন্যই মানিয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয় প্রযুক্তির ধকলও। এতে সামান্য অসতর্ক হলেই অনিবার্য হয়ে ওঠে খেসরকাত। না, শিশু সোহানার পিতা-মাতার অসতর্কতা ছিলো না, ছিলো অটো প্রস্তুতকারক, চালক ও ওই যন্ত্রযান সড়কে চালানোর অনুমোদন দেয়া কর্তার। আইন প্রয়োগে নিযুক্তরাও দায় এড়াতে পারেন না। বসার আসনের নিচে দেড় দু ইঞ্চি ছিদ্রে গলায় পেঁচানো চিকন পলেস্টারের ওড়না যে জড়াতে পারে তা শিশু সোহানার সাথে থাকা পিতা-মাতা বুঝবে কীভাবে? ওই একই ছিদ্রে ওড়না ঢুকে চুয়াডাঙ্গার আরও কয়েকজনের অঙ্গহানি হয়েছে। তারপরও কি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো ত্রুটিমুক্ত করার ন্যূনতম উদ্যোগ নিতে পেরেছি? না, সেটা সম্ভব হয়নি বলেই শিশু সোহানা আমাদের সামনে চরম শিক্ষা হয়ে দাঁড়ালো। এ শিক্ষার পরও যদি নিজেদের সুধরে নিতে না পারি তাহলে নিজেদের সভ্য বলবো কীভাবে?
দায়িত্বশীলদের উদাসীনতার কারণেই নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে। কর্তা বা আমজনতা, কারোর জন্যই স্বাভাবিক মৃত্যুর ন্যূনতম নিশ্চয়তা নেই। সড়ক হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরি। সড়কে চলা বৈধ যন্ত্রযানের উপযোগিতা সনদ কীভাবে মেলে সেটা বোদ্ধাদের অজানা নয়। তাছাড়া অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ যানগুলো নিরাপদ করার দায়িত্ব কার? সময়ের ¯্রােতে প্রয়োজনের নিমিত্তেই এসেছে প্রযুক্তি। নিজেদের উপযুক্ত করতে না পারার কারণেই ঘরে বাইরে কান্না, আশপাশে স্বজন হারানোর আহাজারি। আর কতোদিন নীরব থাকবেন ধর্মাবতা?