ফাইজার চৌধুরী: জমি অধিগ্রহণ নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় টিঅ্যান্ডটির বিভাগীয় প্রকৌশলী কর্তৃক হাইকোর্টে আপীলের প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার বিপরীতে নির্মিয়মান চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ ওই জমিতে সকল প্রকার কার্যক্রমের ওপর ৬ মাসের স্থিতিবস্থা জারি করেছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। গত ৪ ডিসেম্বর রোববার এ আদেশ দেয়া হয় বলে লিখিতভাবে জানিয়েছেন টিঅ্যান্ডটি বিভাগীয় প্রকৌশলীর আইনজীবী।
নথিসূত্রে জানা গেছে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় ও আইন অনুয়ায়ী ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়নি অথচ নির্মাণকাজ চলছে জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের। এমন নালিশ নিয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে আপীল করেন (ফার্র্স্ট আপীল নং ৬৩৪/১৬) বিটিসিএল (সাবেক টিঅ্যান্ডটি)’র বিভাগীয় প্রকৌশলী। আপিল শুনানী শেষে বিচারপতি এসএম এমদাদুল হক ও বিচারপতি মিসেস কাশফিয়া হোসেনের যৌথ বেঞ্চ গত ৪ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নালিশী সম্পত্তিতে সকল ধরণের কর্মকা- বন্ধে স্থিতিবস্থা (স্ট্যাটাসক্যু) জারি করেন।
চলতি বছরের ২২ আগস্ট খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ওই একই দিন চুয়াডাঙ্গা বিজ্ঞ জেলা জজ (১ম আদালত) কর্তৃক দেওয়ানি মোকদ্দমা ৪৪/২০১২ নালিশী সম্পত্তিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন না মঞ্জুর হয়। শুরু হয়ে চলতে থাকে স্কুলের নির্মাণ কাজ। এখন যা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ অবস্থায় মামলার বাদী টিঅ্যান্ডটির বিভাগীয় প্রকৌশলী গত ৪ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করে, উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল শুনানি শেষে মহামান্য বিচারপতি এসএম এমদাদুল হক ও বিচারপতি মিসেস কাশফিয়া হোসেনের যৌথ বেঞ্চ স্থিতিবস্থা (স্ট্যাটাসক্যু) জারি করেন। এই স্থিতিবস্থা প্রযোজ্য হবে মামলার বাদী ও বিবাদীর উভয়ের ক্ষেত্রে, আদেশে এমনটিই বলা হয়েছে।
মামলার বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হয় টিঅ্যান্ডটির বিভাগীয় প্রকৌশলির আইনজীবী সাইদ আলমের সাথে। তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক খাস জমি অধিগ্রহণ ও বন্টনের ক্ষমতা রাখেন। তাই বলে বন্টনের পর তা স্থগিত করে পুনর্বন্টন বা নিজেরাই যেভাবে স্কুল নির্মাণকাজ শুরু করেছেন তা আইনসিদ্ধ নয়। এ কারণেই আমার মক্কেল উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, টিঅ্যান্ডটির অনুকূলে বরাদ্দ ওই জমির খতিয়ান নম্বর নিয়েও ঝামেলা আছে। খতিয়ান নম্বর সংশোধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট সাইদ জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতে এখন ছুটি চলছে তাই মামলার রায় হওয়ার পর গত ৫ ডিসেম্বর আমি আমার প্যাডে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়েছি। যথা সময়ে আদেশের অবিকল নকল পৌঁছে যাবে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস জানান, আদালতের আদেশে উল্লেখ করা আছে এমন একটি কাগজ হাতে এসেছে। এ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণকাজ কী বন্ধ আছে, আর কদিন পরে তো ছাত্রছাত্রী ভর্তি করার কথা? প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক জানান সমস্ত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। দাফতরিকভাবে খোঁজ খবর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও জানান যেখানে স্কুল নির্মাণ করা হচ্ছে ওই জমি ১৯৭৫ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত ছিলো। টিঅ্যান্ডটি তো এ বিষয়টিও জানতো না ।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা ভবনের বিপরীতদিকে প্রায় ৩০ বছর যাবত কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো টিঅ্যান্ডটি। এক সময় এটি ছিলো টেলিগ্রাম অফিস। বর্তমানে তার বিভাগের সাইনবোর্ড ঝুলছে। টেলিগ্রামের ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেলে দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত অবস্থায় থাকে ভবনটি। র্যাপিড আ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠার পর এ স্থানে র্যাবের নিজস্ব ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত প্রায় পাকাপাকি হয়ে যায়। জমি হস্তান্তর জটিলতায় তাও এক পর্যায়ে বন্ধ হয়। অবশেষে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে এখানে কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা হয়। সাধারণ মানুষ বলছে, এবার জমি নিয়ে দুটি সরকারি দফতরের যে বিবাদ সৃষ্টি হয়েছে তাতে শেষ পর্যন্ত পানি কোথায় গড়ায় তা দেখতে হলে শুধু অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।