চুয়াডাঙ্গা ইসলামপাড়ার আজিজুল হক বাদী হয়ে দায়ের করেছেন হত্যা মামলা : সন্দেহভাজন ঘাতকের তালিকায় হাজরাহাটির একজন
কামরুজ্জামান বেল্টু: শুধু প্রথম স্ত্রীর টানে নয়, নতুন করে কলেজছাত্রীর সাথে প্রেমে জড়িয়ে রুবেল হোসেন টুটুল তার দ্বিতীয় স্ত্রী মুক্তা খাতুনকে নির্যাতন করতে শুরু করে। শুক্রবার চাচাতো শ্যালিকার বিয়ের আনুষ্ঠানে দেয়া নাস্তা নিয়ে বাড়ির কথা বলে হাজরাহাটি ওই কলেজছাত্রীর নিকট পৌঁছে দেয় রুবেল হোসেন টুটুল। বিষয়টি জানার পর গত শনিবার সকালে মুক্তা খাতুন আপত্তি তোলে। বাগবিত-ার একপর্যায়ে বালিশ চাপা দিয়ে বা গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে সটকে পড়ে ঘাতক স্বামী। অনুসন্ধানে এসব তথ্য গতকাল পাওয়া গেছে।
মুক্তা খাতুনের পিতা চুয়াডাঙ্গা ইসলামপাড়ার আজিজুল হক বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় রুবেল হোসেন টুটুলকে মূল আসামি করা হলেও ইন্ধনদাতা হিসেবে তার পিতা কুষ্টিয়া দৌলতপুরের মথুরাপুরের সিদ্দিক ম-ল এবং মা জামিরন নেছাকে আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে। এছাড়াও হাজরাহাটির এক ব্যক্তিকেও সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিও রাখা হয়েছে। গত শনিবার বিকেলে মুক্তা খাতুনের মৃতদেহ তালতলা পশুহাটাপাড়াস্থ বাড়ি থেকে উদ্ধারের সময় হাজরাহাটির ওই ব্যক্তির সন্দেহজনক আচরণ অনেকেরই দৃষ্টিতে পড়ে। তাছাড়া হাজরাহাটির ওই কলেজছাত্রীরও ইন্ধন আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা দরকার বলেও মন্তব্য অনেকের।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা ইসলমপাড়ার আজিজুল হকের মেয়ে মুক্তা খাতুনের সাথে কুষ্টিয়া দৌলতপুরের মথুরাপুরের সিদ্দিক হোসেনের ছেলে রুবেলের বিয়ে হয় আনুমানিক ৪ বছর আগে। মুক্তা খাতুন কুষ্টিয়ার পিয়ারাতলা মামাবাড়িতে থাকার সুবাদে এক সন্তানের পিতা ঘরে প্রথম স্ত্রী রেখে মেসে থাকা রুবেল হোসেন টুটুলের পরিচয় হয়। প্রেমসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক সন্তানের মা প্রথম স্ত্রী রুমিকে বাদ দিয়ে রুবেল হোসেন টুটুল মরিয়া হয়ে মুক্তাকে বিয়ে করে। মেয়ের সুখের কথা ভেবে মুক্তার পিতা আজিজুল হক চুয়াডাঙ্গা তালতলা পশুহাটাপাড়ায় বাড়ি করে দেন। পাশেই হোমিওপ্যাথি চেম্বার করে। সেখানে বসে ডাক্তারি করার পাশাাশি হোমিওপ্যাথি ওষুধ কোম্পানি রিফাইনের প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি করতো। এ চাকরি মোস্তাফিজুর রহমান নামক যে ব্যক্তির মাধ্যমে পেয়েছিলো রুবেল হোসেন টুটুল, সেই ব্যক্তির সাথে কিছুদিনের মাথায় বিরোধ দানা বাধে। মোস্তাফিজুর রহমান নিখোঁজ হয়। সেই থেকে তার আর সন্ধান মেলেনি। তার বাড়ি খুলনায়। ফলে সে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে গেছে। দ্বিতীয় স্ত্রী মুক্তাকে হত্যা করে পালানোর পর রুবেল হোসেন টুটুলের সেই অপকর্মের বিষয়টিও উঠে এসেছে আলোচনায়।
রুবেল হোসেন টুটুল গত শনিবার তার স্ত্রী মুক্তা খাতুনকে (২২) হত্যা করে পালানোর আগে শ্বশুরবাড়িতে পাতপেড়ে খেয়ে নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছে মোবাইলফোনে মুক্তার ভাই নাজমুল হককে বলে ঝগড়া হয়েছিলো, মুক্তার একটু খোঁজ নিয়ে দেখো। দ্রুত খোঁজ নিতে গিয়ে নাজমুল হক দেখেন বোনের গলায় ওড়না দিয়ে বেঁধে ঘরের আড়ায় ঝুলিয়ে রাখা। পা ঘরের মেঝেতে হাঁটুগেড়ে রয়েছে মৃতদেহ। লাশ নামানো হয়। পরদিন অর্থাৎ গতপরশু রোববার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়। গতকাল সোমাবার মুক্তা খাতুনের পিতা বাদী হয়ে মামলা করেন। এর মাঝে রুবেল হোসেন টুটুলের নানা অপর্কর্মের তথ্য বের হতে শুরু করেছে। ইসলামপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী তালতলা পশুহাটপাড়ার অনেকেই বলেছেন, ওই রুবেল হোসন ছিলো চিহ্নিত লম্পট। কয়েক দফা সে আপত্তিকর অবস্থায় ধরাও পড়েছে। মুক্তা খাতুনের দিকে তাকিয়ে তার ভাই পিতাদের শক্ত অবস্থানের কারণে তেমন কেউ রুবলে হোসেন টুটুলকে গাছে বাঁধতে পারেনি। পুলিশেও দেয়নি। ঘটনার সপ্তাখানেক আগেও হাজরাহাটির ওই কলেজছাত্রীকে ধরে স্থানীয়রা। কলেজছাত্রীর সাথে আরও বান্ধবীও সেদিন হোমিওপ্যাথি চেম্বারে ছিলো বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পরে ছেড়ে দেয়া হলেও কলেজছাত্রীর সাথে সম্পর্ক ঠিকই রাখে লম্পট ঘরজামাই। চাচাশ্বশুরের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের নাস্তা নিজের বাড়িতে নেয়ার কথা বলে সে হাজরাহাটির কলেজছাত্রীর কাছে পৌঁছে দেয়ার কারণেই মুক্তা জোর আপত্তি তোলে। তাতেই ঝরতে হয়েছে তাকে। তার আড়াই বছরের শিশুকন্যা রুবাইয়া ইসলাম রুহি এখনও তেমনভাবে বোঝেইনি, সে জগতে কী হারিয়েছে। তবে মাঝে মাঝেই মায়ের জন্য কান্নাকাটি শুরু করছে। যখনই তাকে বলা হচ্ছে তোমার মায়ের সাথে লোকটা ঝগড়া করছে, তখনই থামছে রুহি। কেননা, রুহিকে আগেও এভাবে তার নানিবাড়ি থামিয়ে রাখা হতো।