দ্রুত বিচার আইনে চাঁদাবাজি মামলা : বাহিনী প্রধান মমিন দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

চুয়াডাঙ্গার কালুপোলে আটককৃত তিন চাঁদাবাজকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদরের কালুপোলে প্রবাসী পুত্রের পিতার কাছে দাবিকৃত টাকা চাঁদা নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়া তিন চাঁদাবাজকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনে মামলা হয়েছে। এ মামলায় গতকাল আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালত জেলহাজতে প্রেরণের অদেশ দেন।

সূত্র বলেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্যাঙ প্রধান মমিন পুলিশের নিকট বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তবে তার গ্যাঙের অন্য সদস্যদের নাম ধাম বলেছে কি-না তা নিশ্চিত না হওয়া গেলেও তার নিজ গ্রাম ছয়ঘরিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের চিহ্নিত বেশ ক’জন গাঢাকা দিয়েছে। মোমিনসহ তার দু সহযোগীকে কালুপোলের জনগণ ধরে গণপিটুনির পর পুলিশে দেয়। এরপর তার সম্পর্কে অনেক তথ্যই প্রকাশ পেতে শুরু করে। অনেকে মোমিনের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পেতো না। সে যাকে তাকে শুধু মারধরই করেনি, পুলিশের এক সদস্যের গায়ে আঘাত করেও দিব্যি পার পেয়েছে। কারণ, সে ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়াই শুধু থাকেনি, নিজেও ছাত্রলীগের নেতা বলে পরিচয় দিতেও ছাড়েনি।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহ ইউনিয়নের কালুপোল গ্রামের মৃত ছন্নত আলীর ছেলে বরকত আলী একজন কৃষক। তার ছেলে প্রবাসী। সম্প্রতি মোমিন নিজেকে সর্বহারা পাটির প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদার টাকা না দিলে খুন করা হবে বলেও হুমকি দেয়। উপায় না পেয়ে প্রবাসী সন্তানের পিতা বকরত আলী চাঁদার পরিমাণ কমাতে অনুরোধ জানান। দরকষাকষির একপর্যায়ে ১ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। গতপরশু রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়ার আলিম উদ্দীনের ছেলে আব্দুল মোমিন (২৫), শাহাপুরের জাহিদ হাসানের ছেলে নুরুজ্জামান (২৮) ও বহলাগাছির বাবুল মৃধার ছেলে মানিক মৃধা ও শাহাপুরের শান্তির ছেলে মিথুন ওই টাকা আনতে যায়। সেখানে চাঁদার টাকা নিয়ে দরকষাকষি একপর্যায়ে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে হাতেনাতে তিনজনকে আটক করে দেয় গণধোলাই। অবস্থা বেগতিক দেখে পাচির টপকে একজন পালিয়ে যায়। পুলিশ খবর পেয়ে বরকতের বাড়ি থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নিয়ে আসেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতারকৃদেরকে গতকাল সোমবার আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় বরকত আলী বাদী হয়ে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে দূরত্ব বিচার আইনে মামলা করেন।

মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই মাসুদ পারভেজ বলেন, চাঁদাবাজি, মোমিন একাধিক খুন মামলাসহ বহু অভিযোগে অভিযুক্ত। সে তার নিজের নামেই এলাকায় গ্রিন হাউজ নামে একটি গ্যাঙ গ্রুপ গড়ে তুলেছে। এদিকে এলাকাবাসী জানায়, মমিনের নির্দেশে গ্রিন হাউজের সদস্যরা ছয়ঘরি, তিতুদহ, খাড়াগোদা, বড়সলুয়া, হিজলগাড়ি, নেহালপুর, বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠনে গিয়ে চাঁদাদাবি করতো। কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মমিন নিজে সেখানে উপস্থিত হয়ে অস্ত্র প্রদর্শন করত যা অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছে। আর এসব ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর মেনেজ করে দিত মমিনের নিকটজনেরা। মমিনসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা গ্রেফতার হওয়ায় তার গ্রুপের বাকি সদস্য এবং মদদাতারা দিয়েছে গাঢাকা। মমিনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুলিশ তার ব্যবহৃত অস্ত্রের যেমন সন্ধান পাবে তেমনি বাকি সদস্য এবং আশ্রয় প্রশ্রয় দাতাদেরও নাম জানতে পারবে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।