এক সময়ের সেই বাঘা বাঘা নামধারী চাঁদাবাজদেরও করুণ পতন হয়েছে। যাদের নাম শুনলে শিশুরাও শিউরে উঠতো তাদের পরিণতি দেখেও নতুন করে গজে ওঠা চাঁদাবাজ গ্যাংগুলোর হোতাদেরও কেন যে শিক্ষা হয়নি, সেটাই ভাববার বিষয়। ওদেরও পতন অনিবার্য। যা সত্যিই সমযের অপেক্ষা। সন্দেহ নেই। পতনের আগে কতোজনকেই যে ওরা সর্বনাশ করবে কে জানে? দেশি সেলফোনের সিম ব্যবহারের পর এবার পড়শী দেশের মোবাইফোন নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার ইটভাটা মালিকদের অতিষ্ঠই শুধু নয়, আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। চাঁদাবাজচক্রের হুংকার এতোটাই ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ইট উৎপাদনই এখন হুমকির মুখে। চরম অনিশ্চয়তার প্রহর গুনতে হচ্ছে ইটভাটা মালিক-শ্রমিকদের। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তারই সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, যেদিন সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন কার্পাসডাঙ্গায় পুলিশের উদ্যোগে সন্ত্রাসবিরোধী সভা অনুষ্ঠিত হয়, সেদিনই পার্শ্ববর্তী নতিপোতায় অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে সন্ত্রাসীরা। কতোটা বেপরোয়া না হলে এসব করতে পারছে ওরা? চাঁদাবাজচক্রের বিষদাঁত ভাঙার দায় এড়ানোর অজুহাত কাম্য নয়।
সমাজে সব সময়ই ভালো মানুষের সংখ্যা বেশি। মন্দমানুষ হাতে গোনা কয়েকজন হলেও ওদের ভয়ে তটস্থ থাকতে হয় ভালোদের। কারণ ওরা অবৈধ অস্ত্রধারী এবং সঙ্গবদ্ধ। সমাজের সকলে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ালে ওরা যতোই শক্তিশালী হোক, মুহূর্তেই বিলীন হয়। উদাহরণ অসংখ্য। তাহলে সমাজের ভালো মানুষগুলো সম্মিলিতভাবে কেন ঘুরে দাঁড়ায় না? নানাবিধ কারণের অন্যতম দুটি হলো সময় ও সাহস। পুলিশে অপ্রতুলতা থাকলেও কখন পারে, কখন পারে না, তা যেমন বোদ্ধারা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না, তেমনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের ওপর ভরসা রাখতে না পারলে সমাজের মানুষ সাহসী হয় না। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের প্রায় প্রতিটি ইটভাটাতেই চাঁদাবাজচক্র উৎপাত শুরু করেছে। এলাকা ও স্থানভেদে চাঁদাবাজ আলাদা হলেও চাঁদাদাবি ও হুমকিধামকির ধরন অভিন্ন। পুলিশের তরফে এলাকাবাসীর হাতে লাঠি তুলে দেয়া হয়েছে। অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন বেশ ক’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি রোখার আহ্বান জানিয়ে প্রতিটি ইটভাটায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি ১০ জন করে পাহারাদার রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা পুলিশের শীর্ষকর্তা। পক্ষান্তরে ইটভাটা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছেন, প্রতিদিন ১০ জন করে পাহারাদার রাখা মানে মাসে কতো খরচ? সিসি ক্যামেরারই বা নিরাপত্তা কোথায়? পুলিশের শীর্ষকর্তার মতো মাঠ পর্যায়ে কর্তব্যরতরা আন্তরিক হলে চাঁদাবাজদের উৎপাত বন্ধ হতে বাধ্য।
ঠিকই তো, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও অতোটা রসাতলে যায়নি যতোটা গেলে অপরাধীরা যাচ্ছে তাই করতে পারে। বরঞ্চ বর্তমান সরকার দেশের সকল জেলার সকল থানা ও পুলিশি তদন্ত কেন্দ্রগুলোর অপ্রতুলতা কাটিয়ে পদস্থ কর্মকতাদের পদায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না, দেশের যেকোনো এলাকার তুলনায় চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে পুলিশ ফাঁড়ির সংখ্যা বেশি। সেটা যেমন সংখ্যায় তেমনই লোকবল ও আয়তনের তুলনায়। সঙ্গত প্রশ্ন, এরপরও কেন অপরাধীরা অপরাধ করার সাহস পায়? অনেকগুলো জবাবের মধ্যে একটি জবাব হলো- সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ার কারণে। অপরাধ করে পড়শী দেশের সীমান্তে আত্মগোপন করে। জবাবের পক্ষে যে যুক্তিটা নতুন করে খাড়া হয়েছে তা হলো, চাঁদাবাজিতে পড়শী দেশের মোবাইলফোন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা। তাই বলে বসে থাকলে চলবে? যেখানেই চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসী বসে হুঙ্কার দিক না কেন, তাদেরকে সশরীরেই হামলা চালাতে হচ্ছে। অর্থাৎ দেশের অভ্যন্তরে বিচরণ রযেছে অবৈধ অস্ত্রধারীদের। পুলিশের প্রচেষ্টা, সীমান্তরক্ষী বিজিবির দায়িত্বশীলতা নিশ্চয় সন্ত্রাসবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাথেয় হবে। স্বস্তি ফিরবে সর্বস্তরে।