ঐকমত্যের ভিত্তিতে ইসি গঠনে আশাবাদী বিএনপি

রাষ্ট্রপতির সাথে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাথে সংলাপে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বিএনপি। তারা বলেছেন, দেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক সংকট, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রপতির যে উদ্যোগ, তা নিঃসন্দেহে একটা ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করবে। সংকট নিরসনে এই আলোচনার প্রক্রিয়াটা অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে আবারো রাষ্ট্রপতি তাদের ডাকবেন। সেক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। গতকাল রোববার বিকালে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এক ঘণ্টার সংলাপ শেষে বেরিয়ে আসার পর নেতারা এসব কথা জানিয়েছেন। খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান এবং আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। প্রতিনিধি দলে মির্জা আব্বাসকে রাখা হলেও দেশের বাইরে থাকায় তিনি সংলাপে অংশ নিতে পারেননি। এছাড়া তরিকুল ইসলাম অসুস্থ থাকায় তিনিও বঙ্গভবনে যেতে পারেননি। এদিকে প্রতিনিধি দলের ১১ সদস্য ছাড়াও খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার নুরুদ্দিন আহমেদ (নুরু মিয়া) বঙ্গভবনে যান। সংলাপ শেষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংলাপে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো আইন তৈরি হয়নি। এ কারণে সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের কোনো বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি। আমরা রাষ্ট্রপতিকে বাছাই কমিটি গঠন, নির্বাচন কমিশন গঠন ও আরপিও সংশোধনের বিষয়ে জানিয়েছি। বাছাই কমিটির সদস্য মনোনয়নের পদ্ধতিও জানানো হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতি এই পদ্ধতি পরীক্ষা করবেন। মির্জা ফখরুল জানান, এই সংলাপে মূলত তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেছে বিএনপি। তিনি বলেন, তিনটি প্রধান অংশ ছিল আমাদের প্রস্তাবের। একটি হলো বাছাই কমিটি গঠন এবং সেটা হতে হবে একেবারে নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বাছাই কমিটি। দ্বিতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন, যেটাও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং মতামতের ভিত্তিতে হতে হবে। আর তৃতীয় আরপিও সংশোধন এবং নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার প্রস্তাবগুলো। ফখরুল বলেন, আমরা বলেছি, কী পদ্ধতিতে বাছাই কমিটির সদস্যদেরকে আমরা মনোনীত করবো। আমরা প্রস্তাব করেছি একজন আহ্বায়ক থাকবেন বাছাই কমিটির এবং চারজন সদস্য থাকবেন। একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি, যিনি বিতর্কিত নন এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য-তিনিই হবেন এর প্রধান। ইসি গঠনে বিএনপির প্রস্তাব সহায়ক হবে বলেছেন রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকাই মুখ্য। একটি শক্তিশালী ইসি ও সার্চ কমিটি গঠনের ব্যাপারে বিএনপি যেসব প্রস্তাব পেশ করেছে সেগুলো সহায়ক হবে। নির্বাচন কমিশন ও সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধি দলের আলোচনা হয়।

বিএনপিকে রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনাদের মতামত পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। যে কোনো বিষয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় সমাধানের বহুমুখী পথের সন্ধান দেয়। এ সময় রাষ্ট্রপতিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন গঠনে আলোচনার জন্য তার দলকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির চেয়ারপারসন নির্বাচন কমিশন ও সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রেসসচিব বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রপতির উদ্যোগের সফলতা কামনা করে ও তাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে বলে জানান। এদিকে মির্জা ফখরুল নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে আরো জানান, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে প্রস্তাব দেয়া রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন যে অত্যন্ত গঠনমূলকভাবে সুন্দর করে প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, এটা ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে রাষ্ট্রপতি মনে করেন। একই সঙ্গে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আলোচনা ও সংলাপের বিকল্প নেই। মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনায় আমরা খুশি এবং আশাবাদী। এদিকে প্রতিনিধিদলের সদস্য স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান জানান, দলের চেয়ারপার্সন দলের প্রস্তাবগুলো লিখিত আকারে পাঠ করেন এবং ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেন। তিনি সার্চ কমিটি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির নিকট হস্তান্তর করেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, রাষ্ট্রপতি আমাদের প্রতি খুবই আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। আমরা খুশি হয়েছি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার জানান, সার্চ কমিটি গঠন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির কাছে আমরা আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরেছি। তিনি আমাদের খুব আন্তরিকতা নিয়ে কথা শুনেছেন এবং বলেছেন, প্রয়োজনে আবারো আমাদের ডাকবেন। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দলকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খান।

রাষ্ট্রপতি গুড়ের সন্দেশ, কাজু বাদাম, ফিস সিঙ্গাড়া, ভেজিটেবিল সমুচা, চিকেন পেটিস, চিকেন স্যান্ডউইচ দিয়ে আপ্যায়িত করেন বিএনপির প্রতিনিধি দলকে। এর বাইরেও ি লো নানা ধরনের ফলের রস, কফি এবং চা। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাদের জন্য বৈকালিক নাস্তার এ সব আয়োজন ছিল গতকাল রবিবার বঙ্গভবনে। নাস্তার সময় রাষ্ট্রপতি সকলের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে কুশল বিনিময় করেন। কথা বলেন। অনেকের পারিবারিক খোঁজ-খবরও নেন। বৈঠক শেষে বিএনপি প্রতিনিধি দলকে বিদায় জানাতে বঙ্গভবনের গোলচত্বর অবধি হেঁটে আসেন রাষ্ট্রপতি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, রাষ্ট্রপতির আপ্যায়নে আন্তরিকতা ছিলো অভাবনীয়। লে. জেনারেল অব. মাহবুবুর রহমান জানান, বঙ্গভবনে দারুণ সময় কেটেছে রাষ্ট্রপতির সাথে। তিনি অতিশয় আন্তরিক মানুষ। বৈকালিক আপ্যায়নের বিশাল আয়োজন দেখে খুব আপ্লুত হয়েছি আমরা।

 

Leave a comment