চুয়াডাঙ্গায় স্ত্রীকে হত্যার পর শ্বশুরবাড়িতে পাতপেড়ে খেয়ে পালিয়েছে ঘরজামাই

স্টাফ রিপোর্টার: স্ত্রী মুক্তাকে হত্যা করে শ্বশুরবাড়িতে পাতপেড়ে খেয়ে ঘাতক রুবেল হোসেন টুটুল নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছে ফোন করেছে। ফোন পেয়ে বোনের খোঁজ নিতে গিয়ে ভাই নাজমুল হক দেখেন, বোনের মৃতদেহ ঝুলছে ঘরের আড়ায়। পা হাঁটুগেড়ে ঘরের মেঝেতে। দৃশ্য দেখে বুঝতে বাকি থাকেনি টুটুল তার স্ত্রী মুক্তাকে হত্যা করে সটকেছে।
মুক্তা এক সন্তানের জননী। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ইসলামপাড়ার আজিজুল হকের মেয়ে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আনুমানিক ৪ বছর আগে মুক্তার সাথে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা মথুরাপুর গ্রামের সিদ্দিক ম-লের ছেলে রুবেল হোসেন টুটুলের বিয়ে হয়। টুটুলের সাথে মুক্তার পূর্ব পরিচয় থাকলেও বিয়ে হয় পারিবারিকভাবে। বিয়ের পর মুক্তার পিতা আজিজুল হক তালতলা পশুহাট মোড়ে বাড়ি করে দেন। ওখানেই বসবাস শুরু করেন মুক্তা-টুটুল। এদের সংসারে আসে এক কন্যা। নাম রাখা হয় রুহি। ওর বয়স বর্তমানে আড়াই বছর। টুটুল হোমিওপ্যাথি ওষুধ কোম্পানি রিফাইনের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতো। গতকাল শনিবার বেলা ২টার দিকে টুটুল ইসলামপাড়াস্থ শ্বশুরবাড়ি যায়। পেটপুরে খায়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মুক্তা খাতুনের ভাই নাজমুলের নিকট মোবাইলফোন করে টুটুল বলে, তোমার বোনের সাথে ঝগড়া হয়েছে। দেখো কিছু করলো কি-না। এ কথা শুনে কালবিলম্ব না করে নাজমুল ছুটে যায় বোনের বাড়ি। জানালা দিয়েই দেখতে পায় ঘরের মধ্যে লাশ মেঝেতে হাঁটুগেড়ে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলছে। দরজা বাইরে থেকে দেয়া ছিলো। লাশ নামানোর পাশাপাশি চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকেন। খবর দেয়া হয় পুলিশে। মৃতদেহ রাতে নেয়া হয় তার পিতার বাড়ি ইসলামপাড়ায়। আজ রোববার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করা হতে পারে। সদর থানায় দায়ের করা হতে পারে হত্যা মামলা।
আড়াই বছরের শিশু সন্তান রুহি মাঝে মধ্যেই তার নানাবাড়ি থাকতো। গতকালও ছিলো তার নানির কাছে। সকাল থেকে মুক্তা খাতুনের সাথে তার স্বামী টুটুলের কি হয়েছে তা অবশ্য স্পষ্ট করে বলতে পারেননি তেমন কেউ। তবে মুক্তা খাতুনের ভাই নাজমুলসহ নিকটজনেরা অভিন্ন ভাষায় অভিযোগ করে বলেছেন, টুটুল ছিলো অর্থলোভী। মুক্তা খাতুনের সাথে যখন বিয়ে হয়, তার আগে প্রথম স্ত্রীকে বাদ দেয় টুটুল। সে পক্ষেও এক কন্যা সন্তান রয়েছে তার। সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে টুটুল তার দ্বিতীয় স্ত্রী মুক্তা খাতুনকে নিয়েই সুখের সংসার করবে আশায় কয়েক দফায় ৯ লাখ টাকা, মোটরসাইকেলসহ অনেক কিছুই দেয়া হয়। মুক্তার নামে তিনকাঠা জমিও লিখে দেয়া হয়েছে। ওই জমি বিক্রি করে টাকা দেয়ার জন্যও মুক্তা খাতুনকে চাপ দিতো। তাছাড়া টুটুল বিভিন্ন নারীর সাথে যোগাযোগ করতে দেখে মুক্তা প্রতিবাদ করতো। এসব নিয়ে ওদের ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। টুটুল একদিন ঠিক হয়ে যাবে আশায় ধৈর্য ধরে ছিলেন মুক্তা খাতুনের নিকজনেরা। শেষ পর্যন্ত মুক্তা খাতুনকে যে হত্যা করে শ্বশুরবাড়িতে পেটপুরে খেয়ে নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছে ফোনে বলবে খোঁজ নেয়ার কথা তা কে জানতো? ৪ ভাই বোনের মধ্যে মুক্তা খাতুন ছিলো দ্বিতীয়। তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের ছাত্রী ছিলেন। ২০১৫ সালে এইচএসসি পাস করেন।