সেই মাজারে এবার রাতভর তা-ব চালিয়ে তছনছ করেছে দুবৃত্তরা : অগ্নিসংযোগ

 

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে কামরুজ্জামান বেল্টু: আজ সোমবার ওরশ। অথচ একদিন আগেই গতপরশু রাতে কে বা কারা মাজারের পাঁচিলসহ কবর হাম্বরদিয়ে ভেঙে তছনছ করেছে। আগুন দিয়ে একাংশ পুড়িয়েও দিয়েছে দুবৃত্তরা। চুয়াডাঙ্গা নীলারমোড়ের অদূরবর্তী মাঠের  ইম্প্যাক্ট ফার্ম সংলগ্ন দরবারে ছোয়াদশরীফ তছনছ করাই আর ওরশ হচ্ছে না। খাদেম হোসেন আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, অজ্ঞাতপরিচয়ের হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় নালিশ করা হয়েছে। স্থানীয়দের কেউ কেউ ওই মাজার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে বলেছেন, যে মাজারের অছিলায় নাকি অনেক কিছু হয়, সেই মাজার ভাঙলো অথচ ভাঙচুরকারীদের কিছু হলো না?

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা শান্তিপাড়ার গোলাম মস্তফা শাফাতুল্লাহ ৬ বছর আগে ইন্তেকাল করেন। নিজবাড়িতে দাফন করা হলেও আপত্তির মুখে তা স্থানান্তর করে বুজরুকগড়গড়ি নীলারমোড়ের অদূরবতী মাঠে। গড়ে তোলা হয় মাজার। ভক্ত অনুরাগীদের অনেকেই সেখানে আসা-যাওয়া করেন। প্রতি বছর ২৮ অগ্রায়ণ ওরশের আয়োজন করা হয়। গতবছরও ওরশের রাতেই হামলার ঘটনা ঘটে। এবার যখন ওরশের জন্য কমিটি গঠন করে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে ঠিক তখনই রাতভর তান্ডব চালিয়েছে হামলাকারীরা। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ভক্তছেলে নূরে  আলম বলেন, কাদরিয়া তরিকার হিলহিলা মতে পীরে কামেল নায়েবে রাসুল শাহ সুফি হযরত গোলাম মস্তফা শাফাতুল্লা (রহ:) এর ওফাত দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর ২৮ অগ্রাহয়ণ ওফাত দিবসে ওরশের আয়োজন করা হয়। এবার ৫ম ওফাত দিবসে ওরশ উপলক্ষে পৌর কাউন্সিলর মুন্সি রেজাউল হক খোকনকে প্রধান করে ১৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। গত ২ ডিসেম্বর এ কমিটি গঠন করে ওরশ সফল করার সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছিলো। সোমবার ওরশের সকল প্রস্তুতিই প্রায় সম্পন করা হয়। অথচ একদিন আগে গত শনিবার রাতে দুবৃত্তরা হামলা চালিয়ে মাজার শরীফের সীমানা পাচিল হাম্বর দিয়ে ভেঙে তছনছ করে। কবরও ভাঙচুর করে। একপাশে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

গতকাল রোববার সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, মাজারের পাঁচিল গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কংক্রিটের মাজারটাও ভারি শক্ত কিছু দিয়ে ভাঙার চেষ্টা চলেছে। টিউবওয়েলটি অক্ষত থাকলেও মাজারের ওপরে টিন বাশের চাল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়দের অনেকেই বলেছেন, অনেকেই এই কবরস্থানে মান্নত দিতে আসে। রান্না বান্না করে তা বিতরণও করা হয়। এ বিষয়ে ভক্তছেলে মান্নান বলেছেন, মনের বাসনা পূরনের জন্য অনেকেই মান্নত করেন। মান্নত শোধ দিতে আসেন ভক্ত অনুসারীরা। সে হিসেবে মাঝে মাঝেই রান্না বান্না হয়। তাতে তেমন প্রতিবন্ধকতার মধ্যে কেউ না পড়লেও বারবারই ওরশের সময় একটি চক্র হামলা চালিয়ে তছনছ করে দিচ্ছে। মান্নানের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এলাকার বেশ কয়েকজন বলেছেন, মাজার করে অর্থ বাণিজ্যের ফাঁদ পাতা হয়েছে। যদি মান্নাত করলেই ওই কবরের গুণে মনের বাসনা পূরন হয়, তা হলে কবর যারা ভাঙচুর করলো তাদের কেনো কিছু হলো না?  নাকি সেই শিশুর ছোড়া ঢিলে পাখি বাড়ি ফিরে মরার মতো মরবে?

এলাকার সচেতন যুবকদের অনেকেই বলেছেন, অত্যাধুনিক বিজ্ঞান যুগেও মাজার করে বাণিজ্যের দোকান বসানো মানে সমাজের অসচেতনদের ঠাকানো তেমনই কারো মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর মানে অন্যের অধিকারে আঘাত হানা। যারা হামলা চালিয়েছে তাদের যেমন শাস্তি হওয়া দরকার, তেমনই মাজার করে অর্থ বাণিজ্যের দোকান পাতা ব্যক্তিদেরও নিরুৎসাহিত করা উচিত। উচিত সচেতনতার আলো ছড়ানো।

 

Leave a comment