অন্যায়ের মাত্রা অসহনীয় হলেও শিশু-কিশোরকে মারপিট তথা নির্যাতন করা অমানবিক। বিবেক বর্জিত কাজ। তারপরও হুচুকে মেতে অনেক বিবেকবানকেও শিশু-কিশোরকে বেঁধে নির্যাতনের নৃশংস উৎসবে মেতে ওঠেন। আপত্তি উঠলে দায় এড়ানোর অজুহাত খাড়া করেন। তাতে কি বিবেকের দংশন থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়? অবশ্যই না। সে কারণেই হুচুকে মেতে নৃশংসতার বদলে বিবেকের তাড়নায় শিশু-কিশোর নির্যাতন রোধে শক্ত অবস্থান নেয়া উচিত।
ওই সমাজকে কোনোভাবেই সভ্য বলা যায় না, যে সমাজে চাবুক মেরে শিক্ষা দেয়া হয়। শিক্ষাদান ও গ্রহণের পরিবেশ বা বোঝাপড়ায় মাধুর্য না থাকা মানেই তো অসভ্যতা। তাহলে কেন ঘুরে ফিরে অসভ্যতার নগ্ন বহির্প্রকাশ ঘটে। একজন কিশোর সে না হয় প্ররোচনা অথবা বুঝে না বুঝে লোভে পড়ে অন্যের কিছুতে হাত দিয়েই ফেলেছে। তাই বলে তাকে সুশিক্ষায় সুধরে নেয়ার বদলে বেঁধে মারতে হবে? তাতে কি তাকে সুধরানো যায়? বিপথগামী শিশু-কিশোরদের নির্যাতন করে জেলহাজতে বন্দি দাগিদের সাথে রাখার খেসারত দিতে হয়েছে বলেই তো তাদের সংশোধন কেন্দ্রে রাখার বিধান করা হয়েছে। শিশু-কিশোর সংশোধনাগারও রয়েছে দেশে। শিশুদের জন্য আইনও আলাদা। তাহলে ওদের প্রতি পৃথক দৃষ্টি নয় কেন? বিষয়টি বোঝাবুঝিতে ঘাটতি। বিষয়টি বোঝাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীলদেরও আন্তরিকভাবে আইন প্রয়োগের পথে পাড় বাড়ানো প্রয়োজন। যদিও তাতে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলেই ঘুরে ফিরে শিশু-কিশোর নির্যাতনের শিকার হতো না। নির্যাতনের নৃশংস উৎসবে কলুষিত হতো না সমাজ।
প্রত্যেক শিশুর দিকে দরদী দৃষ্টি দেয়া দরকার। আজকের শিশুই যেহেতু আগামী দিনের কর্ণধার, সেহেতু তাকে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ত্রুটি সুধরে সুপথে নিতে না পারার দায় অবশ্যই বড়দের। বিষয়টি বুঝতে হবে। অন্যের সন্তানকে অবজ্ঞার বদলে আদরে আগলে সুশিক্ষা দিতে পারলে তাকেও অন্যের জন্য উদার মানসিকতার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। তাছাড়া সকলকেই মনে রাখা দরকার শিশু-কিশোরের মূল শিক্ষালয় হলো পরিবার-পরিবেশ।