হরিণাকুণ্ডু পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বদলি

 

গিয়াস উদ্দীন সেতু: ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা (এসও) কামাল হোসেন আখন্দ এক বছর আত্মগোপনে থাকার পর কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গোপনে বদলি হয়েছেন। তিনি এখন পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া ডিভিশনে যোগদান করেছেন। এক বছরের বেশি সময় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে গত ৩ ডিসেম্বর কামাল হোসেন আখন্দ বদলি হন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এসও কামাল হোসেন আখন্দ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ঠিকাদারি কাজ ও চাকরি দেয়ার নাম করে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন। এ নিয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাওয়নাদাররা ভিড় জমাচ্ছেন। কয়েকজন পাওয়ানাদার এসও কামাল হোসেন আখন্দের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ ও চেক জালিয়াতির মামলাও করেছেন। ঝিনাইদহের গয়াসপুর এলাকার ভাবসঙ্গীতের গায়ক মতলেব ফকির অভিযোগ করেন- আব্দুর রশিদ নামে এক ব্যক্তিকে চাকরি দেয়ার নামে তার কাছ থেকে দুই লাখ আশি হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড ঝিনাইদহের কর্মচারী মনিরুল ও আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে চাকরি দেয়ার নামে সর্বমোট ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। মনিরুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি জানান, তার ভাইকে চাকরি দেয়ার নামে ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন আখন্দ। মতিয়ার রহমান নামে এক ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ দেয়ার নামে ১২ লাখ টাকা নিয়েছেন দুর্নীতিবাজ এসও কামাল হোসেন আখন্দ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের হরণিাকুণ্ডু ডিভিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্থানীয় ফলসী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, ঠিকাদার খায়রুল ইসলাম, হরিণাকুণ্ডুর জোড়াদহ গ্রামের এক শিক্ষক ও পোলতাডাঙ্গার ঠিকাদার আব্দুল গনিসহ বহু মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে কামাল হোসেন আখন্দ এক বছরের বেশি সময় পালিয়ে ছিলেন। এরপর টাকা না পেয়ে চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান আদালতে মামলা করেন। মামলাটি এখন বিচারাধীন আছে। হরিণাকুণ্ডু পওর ডিভিশনে টাকার জন্য এখন ঠিকাদাররা ভিড় জমাচ্ছে। এদিকে রানা নামে এক ঠিকাদার জানান, তার কাছ থেকে কাজ দেয়ার নামে ৪ লাখ টাকা নিয়েছেন কামাল হোসেন আখন্দ। তাকে এক লাখ টাকার একটি চেকও দেয়া হয়। তিনি চেক জালিয়াতির মামলা করবেন বলে জানান। বাঘা নামে আরেক ঠিকাদার টাকা আদায়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ জানান, এসও কামাল হোসেন আখন্দ এখাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কাজ ও চাকরি দেয়ার নাম করে টাকা নিয়েছেন এমন কথা শোনা যাচ্ছে। তিনি জানান, কিছু মানুষ এসও কামালের কথায় ঠিকাদারি কাজ করে ডিপার্টমেন্টের কাছে বিল চাচ্ছে। তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে এ সব ঠিকাদারি কাজের কোনো অনুমোদন নেই। উল্লেখ্য, শাখা কর্মকর্তা (এসও) কামাল হোসেন আখন্দ নিজেই ঠিকাদার সেজে কাজ করতেন। তিনি খাল খননসহ বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ নামমাত্র করে বিল তুলে নিতেন। সম্প্রতি হরিণাকুণ্ডু পানি উন্নয়ন বোর্ডে একজন এসডি দায়িত্ব গ্রহণের পর এসও কামালের দুর্নীতি ধরা পড়ে। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের ভবানীপুর ও লতিডাঙ্গা অভিমুখে বয়ে যাওয়া টি-১ (এস-২) সেচ খালটির ২.৫ কিলোমিটার খননের জন্য ওয়াপদা কর্তৃপক্ষ ১১ লাখ টাকার ই-টেন্ডার করে। টেন্ডারে খুলনার আমিন অ্যান্ড কোম্পানি নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কাজ পাই। কিন্তু এসও কামাল আখন্দ ঠিকাদারের নিকট থেকে ৪ লাখ টাকায় কাজটি কিনে নিজেই করেন। কাজটি সঠিক ও যথাযথভাবে সম্পন্ন না করে বিল তুলে নেয়া হয়। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চটকাবাড়িয়া আন্দুলিয়া এস-১ খালের ব্রিজে এক কাজ দুইটি টেন্ডারের মাধ্যমে দুইজন ঠিকাদারকে দেয়া হয়। এছাড়াও এস-১ এর টি-২ খালের কাজ না করে বিল উত্তোলন করেন এসও কামাল। এসব বিষয়ে এসও কামাল হোসেন আখন্দ জানান, যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি, তাদের টাকা দিয়ে দেবো। তিনি স্বীকার করেন, পাওয়ানাদারদের জন্য আমি ঠিকমতো অফিস করতে পারিনি। দিনদিন ঝুঁকির মধ্যে ছিলাম। এ কারণে আমি গোপনে বদলি হয়ে চলে এসেছি। দয়া করে আপনি এসব কথা পত্রিকায় যেন লিখবেন না।