চেয়ারম্যান মেম্বার ও আ.লীগ নেতৃবৃন্দ অবরুদ্ধ

১০ টাকার চাল না পেয়ে অর্ধশত নারী-পুরুষের বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদে বিক্ষোভ

 

বেগমপুর প্রতিনিধি: ১০ টাকা কেজি দরের চালের জন্য প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদে বিক্ষভ করেছে। তালিকা প্রস্তুতকারীদের দোষত্রুটি তুলে ধরে বিক্ষভকারীরা ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও উপস্থিত আ.লীগের নেতৃবৃন্দকে অবরুদ্ধ করে। আগামীতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা এলে এ সমস্থ দরিদ্র মানুষের সহযোগিতা করার আশ্বাস পেয়ে বাড়ি ফেরে বিক্ষোভকারীরা। তবে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

জানা গেছে, অক্টোবর মাস থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের মাঝে খাদ্য-বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চালবিক্রি শুরু করে সরকার। প্রথম থেকেই চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ও তিতুদহ ইউনিয়নের সুবিধাভোগীদের নামের তালিকায় হতদরিদ্রদের চাইতে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নামে তালিকা হয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগে তোলে। অভিযোগের পাল্লাভারি হতে থাকলে উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়ে সরেজমিনে গ্রামে গ্রামে গিয়ে কিছু সচ্ছল ব্যক্তির নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে প্রকৃত হতদরিদ্রদের নাম অন্তর্ভুক্তি করে। নাম কর্তনের পর থেকে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতৃবৃন্দ নিজেদের মধ্যে একে অপরের তালিকার দোষত্রুটি খুঁজতে থাকে। ফলে ৫ কিস্তির মধ্যে ৩ কিস্তির চাল বিতরণ শেষ হলেও অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ অব্যাহত থাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেগমপুর ইউনিয়নের মজিবপাড়া এবং বেলেমাঠ পাড়ার নুরজাহান, জেসমিন, বানু, আকলিমা, মনিকা, কহিনুর, হাসিনা, শহিদা, ময়না, শিউলী, শরিফা, জামিরন, রাবিয়া, দোলন, মরিয়ম, রহিমা, জহুরুল, আছিয়া, বদুরুন নেছা, হাজেরা, মালেকাসহ প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষকে চালের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করার জন্য কোটালী গ্রামের মোহাম্মদ আলী ওরফে খোকনের ছেলে আ.লীগ নেতা সেলিম উদ্দীন আলমসাধু ভাড়া করে ওই সমস্ত লোকজনকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাসের নিকট পাঠান। বিষয়টি দেখার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান তাদেরকে বেগমপুর ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট পাঠিয়ে দেন। পরিষদে ঢুকেই ওই সমস্ত লোকজন বিক্ষোভ শুরু করে দেয়। পরিষদে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার, বেগমপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মোবারক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হামিদুল্লাহসহ উপস্থিত ইউপি সদস্যদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভকারীররা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতৃবৃন্দ তাদেরকে পরিষদের সভাকক্ষে ডেকে বসান। এ সময় নেতৃবৃন্দ তাদের অভিযোগ শোনেন এবং কার্ডের সীমাবদ্ধতার কথা বলেন। বিক্ষোভকারীদের কয়েজনকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, সেলিম আমাদের গাড়িভাড়া দিয়ে উপজেলায় পাঠিয়েছে ১০ টাকার চালের কার্ডের জন্য। আবার অনেকেই কী জন্য গিয়েছে তা জানেন না বলে জানান।

সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস বলেন, আসলে উপজেলা থেকে সবকিছু নিরূপণ করা যায় না। তাই তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে সেলিম উদ্দীন বলেন, আমি রাজনীতি করি। বঞ্চিত দরিদ্র মানুষগুলো উপজেলা চেয়ারম্যানের লোক। তাই আমি তাদেরকে সেখানে পাঠিয়েছি। এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, বেগমপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ২৪৫ জনের নামের তালিকা হয়েছে এবং তালিকা প্রস্তুত কমিটি আছে। আমি সেই কমিটির একজন। পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য আমি একটি নামও তালিকায় দিতে পারেনি। এর উত্তর আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মোবারক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হামিদুল্লাহ বলেন, চাহিদার তুলনায় কার্ড কম। যারা অভিযোগ করছে খবর নিয়ে দেখেন যারা তালিকাভুক্ত হয়েছে তারা এদের চেয়ও গরিব। তারপরও বলবো আগামীতে সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা এলে এদের বিষয়টি দেখা হবে। এটা নিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার রাজনীতি বা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার পাঁয়তারা ছাড়া কিছুই না।