উষ্ণ রসালো দক্ষিণাকে তাড়িয়ে শুষ্ক শীতল উত্তরার আগমনে ফের বাধা
গ্রামবাংলায় কুমড়ো-কলাইয়ের বড়ি দেয়ার ধুম : সতর্কতা জারি
আলম আশরাফ: শীতে গ্রামবাংলার গৃহিণীরা শুধু নলানি গুড়ের পিঠা পুলি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন না, কুমড়ো-কলাইয়ের বড়িও বসান। বড়ি বসাতে হলে দরকার হয় অনুকূল আবহাওয়া। মেঘলা কিংবা কুয়াশা বড়ি দেয়া গৃহিণীদের হয়ে দাঁড়ায় মনোকষ্টের কারণ। কুসংস্কারের অপয়া অপবাদও জোটে কপালে। ফলে হিসেব কষেই ভেজাতে হয় মাশকলাই। কুরতে হয় চালকুমড়ো। সেই হিসেব মেলাতে কিছুটা বিলম্ব হলেও শুষ্ক শীতল উত্তরা পেয়ে কুমড়ো-কলাইয়ের বড়ি দেয়ায় মেতেছে গ্রামবাংলা পল্লি অঞ্চল। যদিও বঙ্গোপসাগররে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট মেঘমালা গত তিনদিন ধরে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে প্রবল বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকলেও নিম্নচাপের প্রভাবে পাল্টে যেতে পারে পরিস্থিতি। ফলে বড়ি দেয়া গৃহিণীদের আজই সতর্ক হওয়া উচিত।
আবহওয়াবিদেরা বলছেন, এবার শীতের শুরুতে কিছুটা বৈরি আবহাওয়া দেখা দেয়ার মূলে ছিলো বঙ্গোপসগারে কয়েকটি লঘুচাপ। ফলে বাংলাজুড়ে উত্তরে বাতাস আসতে খানেকটা বিলম্ব হয়। যদিও উষ্ণ রসালো দক্ষিণার চাপে শীতল শুষ্ক উত্তরা আসতে বেশ সময় নিয়েছে। তাতে কি? গ্রামবাংলায় পিঠা-পুলিতে কমতি হয়নি। যদিও খেঁজুরগাছ অতোটা রস দেয়নি, যতোটা রস দেয় উত্তরা পেলে। তবুও এবার গুড়ের দাম বেশি হওয়ায় গাছি-গিন্নি উভয়ই খুশি। দক্ষিণা বাতাস গেছে, উত্তরা হিমেল হাওয়া ভর করেছে। নদী অববাহিকায় সকালে কুয়াশা দেখা দিলেও তা কমতে শুরু করেছে। এটাই মক্ষুম সুযোগ ভেবে গ্রামবাংলায় গত কয়েক দিন ধরে কুড়ড়ো-কলাইয়ের বড়ি দেয়ার ধুম পড়েছে।
এবার কলাই-কুমড়ো বড়ির ব্যয় কেমন? কীভাবে দিতে হয় স্বাদের এই বড়ি? মাশকলাই ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর একটি বস্তা বা মোটা কাপড়ে ডলা দিলেই খোসা আলাদা হয়ে আস্ত আস্ত ডার বেরিয়ে আসে। শুকনো জায়গায় নেড়ে দিয়ে ডালের রস মারতে হয়। অপরদিকে কুরতে হয় কুমড়ো। দুটির মিশ্রণে দিতে হয় ঢেঁকিতে। অথবা জাতা-চাকিতেও পেশা যায়। ওটাই মূলত বড়ির মূল উপকরণ। এরপর সাত সকালে মৃয়মান রোদে বসে ওই ডাল-কুমড়োর বাটা বা কোটা মিশ্রণ নেড়ে নেড়ে ফেনিয়ে নিতে হয়। বড়ি বসানোর উপযোগী হয়েছে কি-না তা পানিতে ফেলে পরীক্ষা করা যায়। পনিতে যতোটা ভালো করে ভাসে ততোটাই সুন্দর করে ফেনিয়ে নেয়া হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। এরপর? চালি বা চালনে বসানো হয় বড়ি। এবার বড়ি দেয়ার জন্য গৃহকর্তাদের এবারও গতবারের তুলনায় কম খরচ হচ্ছে না। বরঞ্চ খরচ কিছুটা বেড়েছে। চুয়াডাঙ্গার গ্রামবাংলায় এবার মাশকলাই ৬২ থেকে ৭০ টাকা কেজি। কুমড়োর আকার বুঝে দাম। ২৫ থেকে ৭৫ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে কুমড়ো। কুমড়োর আকাল দেখা দিলে অনেকে পেঁপে ও পেঁয়াজ দিয়েও বড়ি বসান। পেঁয়াজের দাম এবার যেমন সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে, তেমনই পেঁপের দাম এবার এখনও পঁচিশ পেরোয়নি।
বড়ি স্বাদের করতে হলে দরকার দিনে ঝলমলে সুন্দর রোদ আর রাতে তীব্র শীত। অন্যথায়? হারাতে পারে খাওয়ার উপযোগিতা। এ জন্য-ই বড়ি দেয়ার আগে ছুত-পাত নিয়ে নানা কুসংস্কার আছে। না, কেউ অছুত বা অপায়া নন। আবহাওয়ার উপযুক্ততা বুঝে বা আবহাওয়ার পূর্বাভাস বুঝে বড়ি বসাতে পারলেই মুখে ফুটবে হাসি। বড়ি বেগুন আর আলুর চিরো চেনা তরকারি নিয়ে পাত পেড়ে খাবেন কর্তা। যদিও আমাদের দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিশ্বাস করা সত্যিই বড় দায়। তবু মাঝে মাঝে তো ঠিক হয়! সে যা হয় হোক। ঝুঁকি তো নিতেই হয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। তাপমাত্রা তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে গত তিনদিন ধরে মশুলধারে বৃষ্টি ঝরালেও তা দক্ষিণ-পশ্চিমে অগ্রসর হওয়ায় আমাদের দেশের আকাশ মেঘলা হওয়ার সম্ভবান খুবই কম। তবে নদী অববাহিকায় সকালে ও রাতে কুয়াশা পড়বে। আগামী ২৪ ঘণ্টা আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকলেও নিম্নচাপের প্রভাবে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর বুলেটিনে বলেছে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপটি শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। যার কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদফতর এ তথ্য জানায়। তবে নিম্নচাপটি বেশ দূরে থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে আবহাওয়ার ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না। এ সময়ে সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্কই থাকবে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ১০ এবং সর্বোচ্চ টেকনাঠে ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক শূন্য ও সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদফতর।