গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে সন্দিগ্ধ তিন চাঁদাবাজ নিহতের ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছে অনেকেই। অপরদিকে ইটভাটায় চাঁদাবাজি বন্ধে রাতে ইটভাটা এলাকায় চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ।
গাংনী থানা সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোরে পুরাতন মটমুড়া একতা ইটভাটার পাশ্বে বন্দুকযুদ্ধের আগে পুলিশের ওপর সন্দিগ্ধ চাঁদাবাজদের হামলা, বোমা নিক্ষেপসহ সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এসআই শংকর কুমার ঘোষ বাদী হয়ে গাংনী থানায় মামলা তিনটি দায়ের করেন। মামলাগুলোতে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে, সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর আক্রমণের অপরাধের ধারাযুক্ত করা হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত মহিবুল, তাজমুল ও তুহিনের নাম উল্লেখ পুর্বক অজ্ঞাত আরো ১৬/১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিবেশ পরিবেশ বিরাজ করছে। আমতৈল, মাকিদিয়া, ভোলাডাঙ্গা, কেশবনগরসহ আশেপাশের এলাকা থেকে বেশ কিছু লোক আত্মগোপন করেছে বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এছাড়াও সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির মামলায় এর আগে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজনও দু দিন থেকে গাঢাকা দিয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেছে, বন্দুকযুদ্ধে নিহত তিনজনের বেশ কয়েকজন সহযোগীর বাড়ি আমতৈল, মানিকদিয়া ও ভোলাডাঙ্গাসহ আশেপাশের গ্রামে। তারা এলাকায় বিভিন্নভাবে বিতর্কিত। অন্ধকার জগতের সাথে তাদের বেশ সখ্যতা রয়েছে বলেও এলাকায় অভিযোগ রয়েছে। তাদের আত্মগোপনের কারণে ইটভাটায় চাঁদাবাজিতে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলেও এলাকায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্তা কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, একতা ইটভাটায় পুলিশের ওপর আক্রমণের ঘটনায় যারা জড়িত ছিলো তাদেরকে চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই তাদেরকে আটক করা সম্ভব হতে পারে। পুলিশের দায়ের করা তিনটি মামলার আসামি হিসেবে তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গাংনী থানার একটি সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন যাবত গাংনীর বিভিন্ন ইটভাটা মালিকদের কাছে চরমপন্থি ও চাঁদাবাজ পরিচয়ে মোটা টাকা চাঁদা দাবি ছাড়াও শ্রমিকদের মারধর করেছে দুর্বৃত্তরা। এনিয়ে গত সোমবার দুপুরে পুলিশ প্রশাসন ও ইটভাটা মালিকদের মধ্যে মতবিনিময় সভা করা হয়। সেই সাথে চাঁদাবাজদের আগমনের বিষয়টি পুলিশের কাছে জানানোর জন্য বলা হয়। মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় মটমুড়া গ্রামের একতা ইটভাটায় চাঁদাবাজরা হামলা করে। সংবাদ পেয়ে গাংনী থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়। চাঁদাবাজরা পুলিশকে আক্রমণ করলে পুলিশও পাল্টা আক্রমণ করে। এতে ওই তিন চাঁদাবাজ নিহত হয়। এ ঘটনায় ইটভাটা মালিকরা স্বস্তি প্রকাশ করে মিষ্টি বিতরণ করেছে। সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন এলাকার গরু ব্যবসায়ীরা। রাতে বিভিন্ন গো হাট থেকে বাড়ি ফেরার পথে গরু ব্যবসায়ীরা ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছিলেন।
এদিকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজদের ধরিয়ে দেয়া ছাড়াও ইটভাটা এলাকায় সন্ধ্যা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মাইকিং করা হয়েছে। মেহেরপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশনা সংক্রান্ত মাইকিঙে বলা হয়েছে- ইটভাটা মালিক, কর্মরত শ্রমিক ও পোড়াই মিস্ত্রি ছাড়া অন্য কেউ সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ইটভাটায় প্রবেশ করতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভোরে মটমুড়া একতা ইটভাটার কাছে সন্দেহভাজন চাঁদাবাজদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ষোলটাকা ইউনিয়নের মানিকদিয়া গ্রামের মহিবুল ও তাজমুল এবং পাশ্ববর্তী ভোলাডাঙ্গা গ্রামের তুহিন নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি, দুটি বোমা, দুটি রামদা উদ্ধার করেছিলো পুলিশ।